৯/১১-র স্মৃতি উস্কে নিউ ইয়র্কে ট্রাক-হামলা, হত ৮

নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্লাসিও বলেন, ‘‘এটা জঙ্গি হামলা। নিরপরাধ মানুষের উপরে কাপুরুষোচিত আক্রমণ।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৭
Share:

ভয়ার্ত: ম্যানহাটনের রাস্তায় ট্রাক হামলার পরে স্তব্ধ কিশোরী (ইনসেটে)। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি।

একটা লোক। আর একটা সাধারণ পিক আপ ট্রাক। ৯/১১-র পরে নিউ ইয়র্ক শহরে জঙ্গি হামলার ত্রাস ফেরাতে এই দু’টোই যথেষ্ট ছিল।

Advertisement

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটে পাঁচ নাগাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কয়েকটি ব্লক দূরে আচমকাই চড়াও হয় ঘাতক ট্রাকটি। মুহূর্তের মধ্যে ১৬ বছর আগেকার ভয়ঙ্কর স্মৃতি ধাক্কা দিয়ে যায় নিউ ইয়র্কবাসীকে। এ দিন লোয়ার ম্যানহাটনের ওয়েস্ট স্ট্রিটে ‘সাইকেল পাথ’-এ (সাইকেল চলার পথ) আইএস জঙ্গির ট্রাক পিষে দিয়েছে অন্তত আট জনকে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ছ’জন। দু’জনের মৃত্যু হয় কিছু পরে। নিহত আট জনের মধ্যে পাঁচ জন আর্জেন্তিনার নাগরিক। জখম আরও ১১ জন। ট্রাকচালক, ২৯ বছর বয়সি সেফুল্লো হাবিবুলেভিক সাইপভের পেটে গুলি মেরে তাকে কাবু করেন রায়ান ন্যাশ নামে এক পুলিশ অফিসার। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই চালক।

নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্লাসিও বলেন, ‘‘এটা জঙ্গি হামলা। নিরপরাধ মানুষের উপরে কাপুরুষোচিত আক্রমণ।’’ পুলিশ জানিয়েছে, আদতে উজবেকিস্তানের বাসিন্দা সেফুল্লো কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে হামলার ছক কষেছিল। হোম ডিপো থেকে ভাড়া নিয়েছিল ওই পিক-আপ ট্রাকটি। দুপুরবেলা হঠাৎ সেটি নিয়ে সাইকেল পাথ-এ হানা দেয় সে। পথচলতি লোকজনকে ধাক্কা মারতে মারতে একটু এগিয়ে একটি স্কুলবাসের উপরে আছড়ে পড়ে। বাসে থাকা দুই স্কুলপড়ুয়া এবং আরও দুই ব্যক্তি আহত হন।

Advertisement

ট্রাক ফেলে এর পরে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নেমে পড়ে সেফুল্লো। এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ‘এই সময়ে ‘আল্লা হো আকবর’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে সে।’ তার পরে ন’দশটা গুলির শব্দ শুনেছেন ওই প্রত্যক্ষদর্শী। ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে, তুবড়ে যাওয়া ট্রাক ছেড়ে ইতিউতি দৌড়চ্ছে সেফুল্লো। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তাকে গুলি করেন বছর ২৮-এর পুলিশ অফিসার রায়ান ন্যাশ। পেটে গুলি লেগে সেফুল্লো এখন হাসপাতালে। ট্রাকের ভিতর থেকে পুলিশ একটি চিরকুট খুঁজে পায়। তাতেই আইএসের নাম লেখা ছিল।

আরও পড়ুন: খুব ভাল লাগে এই দেশ, বলত সেফুল্লো

হামলার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে লিখেছেন, ‘‘পশ্চিম এশিয়ায় আইএস-কে কোণঠাসা করছি। আমাদের দেশে ওদের আর ফিরতে বা ঢুকতে দেব না। যথেষ্ট হয়েছে!’’ এই সূত্রেই তিনি মনে করিয়েছেন তাঁর প্রস্তাবিত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গও। বিশেষ ১০টি মুসলিম দেশের নাগরিকের উপরে আমেরিকায় ঢোকার ক্ষেত্রে এই নিষেধ (যদিও উজবেকিস্তান সেই তালিকায় নেই) চালু করতে চান তিনি। আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে নিষেধ কার্যকর করতে পারেননি প্রেসিডেন্ট। এই হামলার পরে তিনি ফের অভিবাসীদের পরিচয়ের খুঁটিনাটি পরীক্ষার উপরে জোর দিয়েছেন। পরে সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প প্রস্তাব দেন, যে ভিসা পেয়ে সেফুল্লো আমেরিকায় এসেছিল, সেই ধরনের ভিসা দেওয়াই বন্ধ করে দেওয়া হোক।

সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে আইএস জঙ্গি গোষ্ঠী সংক্রান্ত বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে পুলিশ সেফুল্লোর নাম খুঁজে পেয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। এখনও পর্যন্ত সে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করছে বলে দাবি। উজবেক সরকারও তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। নিউ জার্সির প্যাটারসনে সাইপভের বাড়িতেও হানা দিয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশ তাকে জেরা করে কী জানতে পেরেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement