বিরোধ: বাবা চার্লস ও সৎমা ক্যামিলার সঙ্গে হ্যারি। পাশে স্ত্রী মেগান। রয়টার্সের ফাইল চিত্র
তাঁরা বলেছিলেন, ‘পুরো সত্যটা’ জানেন শুধু তাঁরা। তাই মুখ খুলেছেন ক্যামেরার সামনে। কিন্তু সেই ‘পুরো সত্য’ রাজপরিবারের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দেবে না তো? ব্রিটেনের রাজপুত্র হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগানকে নিয়ে নতুন তথ্যচিত্র সেই জল্পনা উস্কে দিচ্ছে।
আজ, বৃহস্পতিবার, একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘হ্যারি অ্যান্ড মেগান’ নামের তথ্যচিত্রটির ছ’টি এপিসোডের প্রথম তিনটি। প্রত্যাশা মতোই এই তথ্যচিত্রে অকপট তরুণ দম্পতি। হ্যারির কথায়, ‘‘প্রথম থেকেই মেগানের প্রতি অত্যন্ত নির্মম আচরণ করত আমাদের দেশের ট্যাবলয়েড। কিন্তু রাজপরিবারের অনেকেরই দাবি, সংবাদ মাধ্যমের এই কাটাছেঁড়া আসলে এক ধরনের ‘অগ্নিপরীক্ষা’। মেগান এই পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে কি না, তার। আমি সেই কথা বিশ্বাস করিনি। আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলাম, মেগানকে নিয়ে আমার পরিবারের একটাই সমস্যা— ওর (ভিন্ন) জাতি!’’
২০২০-র গোড়ায় ব্রিটিশ রাজপরিবার থেকে বেরিয়ে আসেন হ্যারি ও মেগান। ছেলেকে নিয়ে নতুন ‘আড়ম্বরহীন’ জীবন শুরু করেন আমেরিকায়। পরে তাঁদের একটি মেয়েও হয়েছে। রাজপরিবারের খেতাব ও দায়িত্ব ছেড়ে আসার সেই সিদ্ধান্তের সমর্থনে হ্যারি বলেছেন, ‘‘আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নিরাপত্তাই আমার কাছে একমাত্র বিবেচ্য বিষয় ছিল। আমি চাইনি, মায়ের সঙ্গে যা হয়েছিল, আমার পরিবারের সঙ্গেও ঠিক তাই হয়। আমরা এটাও চাইনি যে, আমাদের মা-বাবার যে ভাবে বিচ্ছেদ হয়েছিল, আমাদেরও সেই দুঃখজনক পথে হাঁটতে হয়।’’
তথ্যচিত্রে বারবার উঠে এসেছে রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রথম স্ত্রী, হ্যারির মা ডায়ানার কথা। রাজপরিবারের সঙ্গে প্রিন্সেস অব ওয়েলসের সংঘাত, তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ ও একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক, এ সব কিছু নিয়ে তখন কম কাটাছেঁড়া করেনি ব্রিটিশ তথা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। প্যারিসের টানেলে ডায়ানার প্রাণঘাতী গাড়ি দুর্ঘটনার জন্যও দায়ী করা হয় পাপারাৎজ়িকে। মেগানকে ‘একঘরে’ করে রাখা, রাজপরিবারের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে মেগানের মানসিক অবসাদ, এই সব কিছুর জন্য সংবাদ মাধ্যমের তীব্র সমালোচনা করেছেন হ্যারি। স্বামী যখন সেই সব কথা বলছেন, তখন চোখের জল বাঁধ মানেনি মেগানের।
বছর দেড়েক আগে আমেরিকান টিভি সঞ্চালক ওপ্রা উইনফ্রিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও রাজপরিবারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন হ্যারি-মেগান। এই নতুন তথ্যচিত্র পরিবারের সঙ্গে তাঁদের ফাটল আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, এই আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের মৃত্যুর সময়ে চার্লস নাকি তাঁর ছোট ছেলেকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, ঠাকুরমার মৃত্যুশয্যার পাশে মেগানের উপস্থিত থাকার কোনও দরকার নেই, শুধু হ্যারি থাকলেই হবে। বাবার সেই কথা মান্য করে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে একাই গিয়েছিলেন হ্যারি। তবে সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন শেষকৃত্যের অন্যান্য অনুষ্ঠানে। আজ তথ্যচিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পরে অবশ্য এখনও পর্যন্ত সে বিষয়ে মুখ খোলেনি রাজপরিবারের কেউ। তথ্যচিত্রের নির্মাতা সংস্থাটির দাবি, হ্যারি-মেগানের বিবৃতির পাল্টা জানতে রাজপরিবারের বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরা।