রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (বাঁ দিকে) তাঁর সেনাবাহিনীতে বিদেশিদের নিয়োগ করছেন। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
প্রায় দেড় বছর ধরে যুদ্ধ চলছে পূর্ব ইউরোপে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন বিদেশিরাও। বিদেশি তরুণদের সেনাবাহিনীতে কাজে লাগানোর জন্য টোপ দিয়েছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেই টোপই গিলেছেন নেপালিরাও। নেপাল থেকে গত এক বছরে অনেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। নেপালের সংবাদমাধ্যম নেপাল প্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করার লক্ষ্যেই শয়ে শয়ে নেপালি যুবক পুতিনের সেনায় যোগ দিয়েছেন। পুতিনের হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন তাঁরা।
কিন্তু কেন? রাশিয়া, ইউক্রেনের যুদ্ধে নেপালিদের আগ্রহ কিসের?
দ্য ডিপ্লোম্যাট একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, বিদেশি যুবকদের যুদ্ধে কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিশেষ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন পুতিন। রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে এক বছর যুদ্ধ করলেই সপরিবারে রাশিয়ায় থাকার সুযোগ মিলবে। রাশিয়ার স্থায়ী নাগরিকত্ব পাবেন ওই বিদেশি সেনারা। সঙ্গে রয়েছে মোটা অঙ্কের বেতনের হাতছানিও।
নেপালের মতো ছোট দেশের তরুণ প্রজন্ম রাশিয়ায় এই নিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি এড়াতে পারেননি। অনেকেই তাই দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় চলে গিয়েছেন। আবার রাশিয়ায় অবস্থিত নেপালি পড়ুয়ারাও সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন নাগরিকত্বের লোভে।
রাশিয়ার বাহিনীতে যোগ দেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেপালি যুবক নেপালি প্রেসকে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে তাঁকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রশিক্ষণের সময়েও যা বেতন তিনি পেয়েছেন, তা নেপালের সাধারণ সরকারি চাকুরের বেতনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। যুদ্ধে প্রাণের ঝুঁকি আছে ঠিকই, কিন্তু নেপালে থেকে স্বল্প পারিশ্রমিকে বা বেকার হিসাবে জীবন কাটানোর চেয়ে এই ঝুঁকি অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
রাশিয়ার সেনায় যোগ দিতে গেলে ভাষার বাধা একটি বড় সমস্যা হয়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তা-ও হয়নি। নেপালি তরুণেরা জানিয়েছেন, প্রথম দিকে রাশিয়ান ভাষা শিখতে বলা হলেও পরে সেই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে শুধু ইংরাজি জানলেই রাশিয়ান সেনায় যোগ দেওয়া যায়।
রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে শামিল প্রিগোঝিনের ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার বাহিনী। অনেকের মতে, নেপালি তরুণেরা কেউ কেউ এই ওয়াগনারেও যোগ দিয়েছেন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন তাঁরাই।
তবে রাশিয়ায় অবস্থিত নেপালি দূতাবাস জানিয়েছে, নেপালিদের রাশিয়ার সেনায় যোগদান প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। তা যদি হয়েও থাকে, দূতাবাসকে জানিয়ে কিছু করা হয়নি।