Narendra Modi

Afghanistan Crisis: আফগানিস্তানে সরকারের ধরন দেখে স্বীকৃতি

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের পরিচালনাতেই আফগান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২১ ০৬:৫৩
Share:

ফাইল চিত্র।

আফগানিস্তানে তালিবান সরকারে সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকছে কি না, তা দেখেই ভারত ঠিক করবে, তাদের ভারত স্বীকৃতি দেবে কি না। ওই সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কী হবে, তা-ও এই মাপকাঠির ভিত্তিতে ঠিক হবে বলেই আপাতত ইঙ্গিত দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।

Advertisement

তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে ভারতের সামনে প্রশ্ন, আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে ভারত কি স্বীকৃতি দেবে? আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আজ সর্বদলীয় বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট করেছেন, এ বিষয়ে নয়াদিল্লি অন্যান্য দেশের মতোই ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ পলিসি নিয়েই চলছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কাবুলের পরিস্থিতি থিতু না হওয়া পর্যন্ত ভবিষ্যতের নীতি সম্পর্কে ধৈর্য ধরতে হবে।’’

বৈঠকে বিরোধী নেতারা প্রশ্ন করেছিলেন, ভারত কি আফগানিস্তানের প্রশ্নে একঘরে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে? সূত্রের খবর, বিদেশমন্ত্রী দাবি করেন, ভারত মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের পরিচালনাতেই আফগান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পরে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক মঞ্চ বা আন্তর্জাতিক স্তরে কোনও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমাদের স্বার্থ, কূটনীতি, ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিয়মিত সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে কথা বলছি।’’ গত তিন দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে কথা বলেছেন। জয়শঙ্কর জানান, আগামী কয়েক দিনে প্রধানমন্ত্রী আরও কয়েক জন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁর সঙ্গেও বিভিন্ন দেশের বিদেশমন্ত্রীর কথা হবে।

Advertisement

আফগানিস্তানে পট পরিবর্তনের পরে ভারত এখনও পর্যন্ত তালিবানের সমালোচনা করেনি। সূত্রের খবর, বিদেশমন্ত্রী আজ বৈঠকে জানান, দোহায় আমেরিকা ও তালিবানের মধ্যে ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর’ নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, তালিবান তার সমস্ত ধারা রক্ষা করছে না। তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে ভারত আফগানিস্তানের মাটিতে হক্কানি নেটওয়ার্ক, লস্কর, জইশের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সক্রিয়তা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মহিলাদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। তালিবান সরকারে সমস্ত গোষ্ঠী-সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের উপরেও জোর দিয়েছিল। বৈঠকে বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, তালিবান সরকার গঠিত হলে এ সব ক্ষেত্রে ভারতের নজর থাকবে। জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী ভারতের উপস্থিতি, কার্যকলাপ ঠিক হবে।’’ সরকারের কথা শুনে বিরোধী নেতারা মনে করছেন, তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও সরকার যে যোগাযোগ তৈরি করছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে।

তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে অবস্থান স্পষ্ট না হলেও বিদেশ মন্ত্রক বোঝাতে চেয়েছে, ভারত তালিবান সরকার ও আফগানিস্তানের মানুষকে আলাদা ভাবে দেখছে। জয়শঙ্কর বলেন, আফগানিস্তানের ভারত ৫০০টির বেশি প্রকল্পে কাজ করেছে। তা ওই দেশের মানুষের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের প্রমাণ। তার সুফল মিলবে।তবে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ৩০০ কোটি ডলার খরচ করে ভারতের তৈরি প্রকল্পের সুরক্ষার কী হবে?

বিদেশমন্ত্রী আজ জানান, এখন সরকারের অগ্রাধিকার, আফগানিস্তান থেকে ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনা। এ বিষয়ে সব দলই সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। জয়শঙ্কর জানান, অধিকাংশ ভারতীয়কে উদ্ধার করা গেলেও এখনও অনেকেই আটকে রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ৫৬৫ জনকে উদ্ধার করা হলেও, আরও কত জনকে উদ্ধার করা বাকি, সেই সংখ্যা সরকার জানায়নি। তৃণমূলের তরফে সুখেন্দুশেখর রায় ও সৌগত রায় আফগানিস্তানে আটকে থাকা ১২৫ জন রাজ্যবাসীর তালিকা কেন্দ্রকে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে, অধীর চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, ৩১ অগস্ট আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারের পরেও কোনও ভারতীয় আটকে থাকলে, তাদের কী ভাবে উদ্ধার করা হবে? সূত্রের খবর, এটি যে চিন্তার বিষয়, তা সরকার মেনে নিয়েছে। উদ্ধারের ক্ষেত্রে সমস্যার উল্লেখ করে বিদেশ মন্ত্রক জানায়, কাবুল ছাড়া অন্যান্য শহরে যে সব ভারতীয় রয়েছেন, তাদের কাবুলে নিয়ে আসতেই সমস্যা হচ্ছে। তবে জয়শঙ্করের আশ্বাস, ‘‘সবাইকে ফিরিয়ে আমরা দায়বদ্ধ।’’

সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি নেতারা এ বিষয়ে অবশ্য সরকারের প্রস্তুতি নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, আমেরিকা সেনা প্রত্যাহারের কথা আগেভাগে জানিয়ে দিলেও মোদী সরকার আগাম প্রস্তুতি নেয়নি। সেনা প্রত্যাহারের দিনক্ষণ এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকা ভারতকে জানিয়েছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। চিন যে পাকিস্তানের ‘পিঠে সওয়ার’ হয়ে আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে, সে বিষয়ে সরকারের নীতি কী, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। বামেদের অভিযোগ, সরকার এর উত্তর দেয়নি।

আফগানিস্তান থেকে এ দেশে, বিশেষ করে কাশ্মীরে জঙ্গি পাঠানো নিয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, তার মোকাবিলায় সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস নেতারা। কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা হাসনৈন মাসুদি অভিযোগ তোলেন, কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে মোদী সরকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে। ফলে সরকারই সন্ত্রাসবাদ তৈরির উর্বর জমি তৈরি করে রেখেছে বলে তাঁর অভিযোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement