পাহাড় ও জলপ্রপাতের মাঝে ছবির মতো বাড়ি। এক দিকে পাহাড় ঘেঁষা অস্তগামী সূর্যর হাতছানি, অন্য দিকে বোগোতা নদীর সুন্দরী জলপ্রপাত। ১৯২৩ সালে কলম্বিয়ার সান আন্তোনিও দেল তেকোয়েনডামায় এই বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরি হয় ধনীদের অবসরবিলাসেরজন্য। তবু তা হয়ে উঠল ভৌতিক! ভয়ে ধারকাছ মাড়ান না কেউ। একটা সময়ে দেশের অন্যতম সুইসাইড স্পট হয়ে ওঠে এটি! কেন জানেন?
ফরাসি নকশা ও উঁচু উঁচু জানালা-দরজা দিয়ে এইঅট্টালিকা সাজিয়েছিলেন কলম্বিয়ার নামী স্থপতি কার্লোস আর্তুরো তাপিয়াস। আনন্দ ও আভিজাত্যের বার্তা বহন করত এই প্রাসাদ। কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি পেড্রো নেল ওসপিনার জমানায় তৈরি এই প্রাসাদের নির্মাণ শেষ হলে, এর নাম রাখা হয় ‘দ্য ম্যানসন অব তেকোয়েনডামা ফল্স’।
১৯২৮ সালে এই প্রাসাদ ‘হোটেল দেল সালতো’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। একটু বেশি রেস্ত খরচ করলে এখানে ছুটি কাটানোর সুযোগ মিলত পর্যটকদের। বেশ ভাল সাড়াও পাওয়া যায়। ৪০ বছর ধরে এই প্রাসাদে ভিড় লেগে থাকত ভ্রমণপিপাসুদের। তবে সে সব সুখের দিনে। এর পরই ঘনাল সমস্যা।
১৯৫০ সালে এই হোটেলকেই ভেঙেচুরে আঠারো তলা এক বিলাসবহুল হোটেলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয় কলম্বিয়া সরকার। কিন্তু নানা সমস্যায় সেইকাজ শুরু হয় না। হোটেল দেল সালতো হিসাবেই পড়ে থাকে তা। বোগোতা নদীর ক্রমবর্ধমান দূষণ ও নাব্যতার সমস্যার কারণে এই কাজ বন্ধ রাখতে হয়।
পর্যটকরাও ধীরে ধীরে আগ্রহ হারাতে থাকেন এই ভাঙাচোরা হোটেলের প্রতি। ফলে ব্যবসায় টান পড়ে। অবশেষে নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকেই এই হোটেল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিত্যক্ত বাড়ি হিসাবে পড়ে থাকে এটি। ‘ভূতুড়ে’ বাড়ির তকমা পেতেও দেরি হয় না। তার সঙ্গে যোগ হয় আত্মহত্যার তত্ত্ব। জানলে শিউরে উঠবেন!
স্থানীয় মানুষদের কথায়, স্পেন যখন দক্ষিণ আমেরিকা দখল করতে শুরু করে, তখন স্পেনীয় দখলদারদের হাতেধরা পড়া আটকাতে কলম্বিয়ার কিছু আদিবাসীএই অট্টালিকার পাশের জলপ্রপাতথেকে বোগোতা নদীতে ঝাঁপ মেরে আত্মহত্যা করেন। অনেকে আবার ইতিহাসের সঙ্গে মিশিয়ে দেন মিথ। কেমন সেটা?
তাঁদের কথায়, স্বাধীনতা হারানোর ভয়ে জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ার সময় মাঝ পথে সেই সব মানুষরা ঈগলের রূপ পেতেন ও নিজের স্বাধীনতার খোঁজে উড়ে যেতেন দূরে। এর পরেও একাধিক মানুষ এ বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে মুক্তির স্বাদ খুঁজতে চাইতেন। ইতিহাস ও মিথের প্রভাবে এই বাড়ি দেশের অন্যতম সুইসাইড স্পট হয়ে ওঠে।
বাড়ির ভিতর থেকে আসা কান্নার শব্দ, নানাবিধ ভৌতিক আওয়াজ, ভূত দেখতে যাওয়ার আশায় রাত কাটাতে যাওয়া ব্যক্তিদের মৃত্যুর প্রচার এই বাড়িকে আরও ভয়ের করে তোলে।
২০১১ সালে এর ভুতুড়ে তকমা ঘোচাতেএগোয় সরকার। ‘ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব কলম্বিয়া’ এবং ‘ইকোলজিক্যাল ফার্ম ফাউন্ডেশন অব পরভেনির’ এই হোটেলকে মেরামত করে একে সংগ্রহশালা হিসাবে গড়ে তোলার কাজ চালু করে। নাম হয় ‘তেকোয়েনডামা ফল্স মিউজিয়াম অব বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড কালচার।’ ২০১৩-য় সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে এটি।