ক্যাম্পের পাশেই পড়ে রয়েছে আবর্জনা।
পর্বতারোহীদের ফেলা যাওয়া বর্জ্যের পরিমাণ যে ভাবে বড়ছে তাতে মাউন্ট এভারেস্ট পেতেই পারে অন্য একটি পোশাকি নাম। ‘হায়েস্ট রাবিশ ডাম্প’! অর্থাৎ বিশ্বের সর্বোচ্চ আবর্জনার স্তূপ।
ফ্লুওরোসেন্ট টেন্ট, বাতিল হওয়া পর্বতারোহণের যন্ত্রাংশ, ফাঁকা গ্যাস ক্যানিস্টার, এমনকী মানুষের বর্জ্য — এ সব মিলে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। মাউন্ট এভারেস্ট নিয়ে এমনই মত পরিবেশবিদদের।
এত আবর্জনা এল কী ভাবে?
পরিবেশবিদদের মতে, গত কয়েক বছরে নয়, সেই এডমন্ড হিলারি, তেনজিং নোরগের সময় থেকেই একটু একটু করে জমছে এই আবর্জনা। যত দিন যাচ্ছে, পর্বতারোহণের নেশা মানুষের মধ্যে আরও বাড়ছে। প্রতি বছর অনেক বেশি সংখ্যক পর্বতারোহী এভারেস্টে উঠছেন, আর এর সঙ্গেই সমান তালে বাড়ছে আবর্জনার পরিমাণ। তাতে দোসর বিশ্ব উষ্ণায়ন। কারণ, পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বরফ গলতে শুরু করেছে এভারেস্টের। বছরের পর বছর বরফের চাদরে ঢাকা পড়া আবর্জনাও সেই সুযোগে উপরে উঠে আসছে।
আরও পড়ুন: ডারউইন, নিউটনের পাশেই অন্তিম শয্যা হকিংয়ের
সামনে উঠে আসছে আরও একটি কারণ। শেরপা পেম্বা দোরজে জানান, আগে আরোহীরা নিজেরাই নিজেদের খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বয়ে নিতে যেতেন। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আরোহীরা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র শেরপাদের দিয়ে বহন করান। এক বা দু’জন শেরপার পক্ষে একটা দলের এতজনের জিনিস বহন করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেক সময় এভারেস্টেই সেগুলো ফেলে দিতে বাধ্য হন শেরপারা।
এভারেস্ট থেকে ফিরে ১২ জুন এই ছবিটি শেয়ার করেন পর্বতারোহী দ্যামিয়ান বেনেগাস।
তবে হাত গুটিয়ে বসে নেই নেপাল প্রশাসন। পাঁচ বছর আগে নেপাল সরকার দল পিছু ২ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা জমা নিতে শুরু করে। উদ্দেশ্য এভারেস্টে জমে থাকা আবর্জনা নিচে নিয়ে আসা। দলের প্রত্যেক সদস্যকে এভারেস্ট থেকে ন্যূনতম ৮ কিলোগ্রাম আবর্জনা বহন করে নিচে নেমে আসতে হবে। তবেই ওই আগাম জমা নেওয়া টাকা ফেরানো হবে ওই দলকে।
এভারেস্টের বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, সাগরমাথা দূষণ নিয়ন্ত্রক কমিটি (এসপিসিসি)-র প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নেপাল থেকে একটি দল এভারেস্টে উঠেছিলেন। তাঁরা ফিরেছিলেন ২৫ টন কৃত্রিম বর্জ্য এবং ১৫ টন মানুষের বর্জ্য নিয়ে। এই দুয়ে মিলে পরিমাণটা ঠিক কতটা তার আন্দাজ দিতে ওই কমিটি তিনটে ডবল-ডেকার বাসের তুলনা করেছিল।
এর জন্য যথাযথ নজরদারির অভাবই দায়ী বলে মত পেম্বা দোরজে শেরপার। তিনি বলেন, ‘‘পর্বতকে পরিষ্কার রাখার জন্য বেশি উচ্চতার ক্যাম্পগুলোতে যথেষ্ট নজরদারির ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখানে সেটা নেই।’’ আর এক শেরপা অ্যাং শেরিং শেরপা বলেন, ‘‘এভারেস্টকে পরিষ্কার রাখার কাজটা ভীষণই কঠিন। সরকারের পক্ষ থেকেই বিভিন্ন ক্লিনআপ গ্রুপকে বর্জ্য পরিষ্কারে উদ্যোগী করে তুলতে হবে। পর্বতারোহণের জন্য আরও কঠিন নিয়ম কার্যকর করতে হবে।’’
ছবি: এএফপি।