গ্রিস পেলোপোনেস উপদ্বীপের কাছে নৌকা উল্টে গিয়ে ৩০০-র কাছাকাছি পাকিস্তানির মৃত্যু হয়েছে। ছবি: রয়টার্স।
প্রতি বছরের ঘটনা। মানব পাচারকারীদের হাত ধরে অন্তত কয়েক হাজার পাকিস্তানি অবৈধ ভাবে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন। বিপদসঙ্কুল সেই পথ পেরোতে গিয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। গত বুধবার ঠিক এ ভাবেই গ্রিস পেলোপোনেস উপদ্বীপের কাছে নৌকা উল্টে গিয়ে ৩০০-র কাছাকাছি পাকিস্তানির মৃত্যু হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এই মৃত্যু-সংখ্যার কথা দাবি করেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। ঘটনার পাঁচ দিন পরেও পাক সরকার মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। তারা শুধু জানিয়েছে, মানব পাচারে জড়িত থাকার অপরাধে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মৃতদের স্মৃতির উদ্দেশে আজ জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে।
ধৃতদের মধ্যে ৯ জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে। যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদেরও বেশির ভাগের বাস এই অঞ্চলে। স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্তা চৌধরি শওকত বলেন, ‘‘পাচারের এই গোটা পদ্ধতিটা ধৃতদের মস্তিষ্কপ্রসূত। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একটি পুরনো মরচে ধরা নৌকায় ৪০০ থেকে ৭৫০ লোককে তোলা হয়েছিল। পাক বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, কত জন নৌকায় ছিলেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে তারা কিছু জানতে পারেনি। ১২ জনকে বাঁচানো গিয়েছে। তবে নাম গোপন রাখার শর্তে এক পাক অফিসার জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়াতে পারে। পাক সংবাদমাধ্যমে যদিও দাবি করা হয়েছে, ২০০-র উপর নয়, ৩০০-র কাছাকাছি পাকিস্তানির মৃত্যু হয়েছে।
পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মানবপাচারে যারা যুক্ত রয়েছে, তাদের সকলকে অবিলম্বেধরা হবে এবং যথোপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ‘‘মানব পাচারের মতো নৃশংস অপরাধের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছে, তাদের প্রত্যেককে কঠিন শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন শরিফ।’’
পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বরাবরই টালমাটাল। অর্থনীতির অবস্থাও শোচনীয়। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার মুখে এ দেশের বহু মানুষ আইন মেনে হোক কিংবা আইনের ফাঁক গলে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। পূর্বপঞ্জাব, উত্তরপশ্চিম খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুর যুবক ইরান, লিবিয়া, তুরস্ক হয়ে গ্রিস দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেন। অনেকেরই মতে, ‘‘সরকার সব জানে।’’