ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল চিত্র।
করোনা-ত্রাসের আবহেও ক্রমে ভোটের হাওয়া গরম হচ্ছে আমেরিকায়। ভোটের আর মাসতিনেক বাকি থাকতে এ বার আসরে নেমে পড়লেন প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাও। আর নেমেই দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের হয়ে ব্যাট ধরার পাশাপাশি একহাত নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও। সাফ বললেন, ‘‘উনি আমাদের দেশের জন্য খুব খারাপ প্রেসিডেন্ট।’’
গত কাল থেকে শুরু হওয়া ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় সম্মেলনের ওই অলনাইন মঞ্চ থেকে ট্রাম্পকে বিঁধতে ছাড়েননি ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি স্যান্ডার্সও। দেশের অর্থনীতির বেহাল পরিস্থিতি থেকে শুরু করে অতিমারির জেরে বিপর্যস্ত জনজীবন— সবের জন্য ট্রাম্পকেই দায়ী করে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো বেহালা বাজাচ্ছিলেন। আর উনি গল্ফ খেলে চলেছেন।’’
বাইডেনকে ‘আদ্যন্ত ভদ্রলোক’ বলে উল্লেখ করে নভেম্বরের ভোটে জনগণকেই উচিত জবাব দেওয়ার ডাক দিয়েছেন ওবামা-ঘরণী। ট্রাম্পকে ‘গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করে বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট এবং কমলা হ্যারিসকে দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেওয়ার ডাক দিলেন বার্নিও।
ট্রাম্প শিবির কিন্তু এখনও ভারত-তাস খেলেই ভোট-বৈতরণী পেরোতে চাইছে। তিনি ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বলে আগেই মুখ খুলেছিলেন বাইডেন। যার পাল্টা রিপালিকানরা প্রচার করতে শুরু করেছিলেন, ট্রাম্পই ভারতের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কাল এমনকি হোয়াইট হাউসও সেই সুরে সুর মিলিয়ে দাবি করল, ট্রাম্প জমানায় (গত সাড়ে তিন বছরে) ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যা উন্নতি হয়েছে, আর কোনও প্রেসিডেন্টের আমলে তা হয়নি। ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি কাউন্সিলের এক আধিকারিক সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘‘করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে মিস্টার ট্রাম্পের হাত ধরেই একজোট হয়ে কাজ করবে দু’দেশ। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুক্ত বাণিজ্য বহাল রাখার ব্যাপারেও আগামী দিনে যথাসাধ্য করবেন ট্রাম্প।’’
শুধু আগামীর কথা নয়, ‘হাউডি মোদী’ থেকে শুরু করে ‘নমস্তে ট্রাম্প’— অতীতে কত বার, কোথায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ কিংবা কথা হয়েছে, কার্যত তার একটি খতিয়ানও এ দিন পেশ করে হোয়াইট হাউস। দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতিতে মোদীর ভূমিকারও উচ্চকিত প্রশংসা করছে ট্রাম্প শিবির।
তবু চিঁড়ে ভিজছে কই! প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল দলীয় মঞ্চ থেকে বললেন, ‘‘বাইডেনকে ভোটে জিতিয়ে আনতেই হবে। কারণ এর উপরেই আমাদের জীবন নির্ভর করছে।’’ ভোটারদের কাছে বিভাজনের রাজনীতি বর্জন করার আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অশান্ত পরিস্থিতিতে যখনই আমরা সুযোগ্য নেতৃত্ব কিংবা সান্ত্বনার আশায় হোয়াইট হাউসের দিকে তাকিয়েছি, বারবার হতাশ হয়েছি। সহানুভূতি দূরে থাক, শুধু বিশৃঙ্খলা আর বিভাজনই পেয়েছি।’’
ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে ট্রাম্পের দলও। এক বিবৃতিতে রিপাললিকানদের দাবি, ‘‘দলটা তো আসলে বার্নির। বাইডেন শুধুই শূন্য পাত্র মাত্র।’’
বার্নি কট্টরপন্থী বাম মতাদর্শে নিজের আখের গোছানোর চেষ্টা করছেন বলেও দাবি ট্রাম্প শিবিরের। তাঁদের কটাক্ষ, ‘‘এ বার চাকা ঘুরে বার্নির মাথায় চাপবেন কমলা-বাইডেন।’’ তবে রাজনৈতিক চাপ সামলাতে না-পেরে ট্রাম্প শিবির যে এ বার কুৎসিত খেলা শুরু করবে, আজই সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন কমলা।