—ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের সব চেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলাগুলির একটি গুলশনের ‘হোলি আর্টিজান’ বেকারিতে হয়েছিল ২০১৬-র ১ জুলাই। সেখানে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত দুই পুলিশের স্মারক ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। গুলশন থানার অদূরে এই স্মারকটি বেদি থেকে সম্পূর্ণ উৎপাটিত অবস্থায় বুধবার রাতে পাওয়া গিয়েছে। পাশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরের তিনটি পোস্টার মারা হয়েছে। ছাপা পোস্টারগুলিতে আফগানিস্তানের আদলে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছে।
গুলশন-২-এর হোলি আর্টিজান বেকারিতে যে দিন ৫ সশস্ত্র জঙ্গি ঢুকে দখল নেয়, সেই সময়ে রোজা চলছিল। বেকারিটি ছিল ঢাকায় আসা বিদেশিদের পছন্দের জায়গা। সারা রাত দখলদারি চালানোর পরে ১৭ জন বিদেশি-সহ ২০ জনকে গুলি করে বা ধারালো অস্ত্রে গলা কেটে হত্যা করে জঙ্গিরা। নিহতদের মধ্যে ঢাকায় মেট্রো রেলের সমীক্ষায় আসা ৭ জন জাপানি ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। এ ছাড়া ৯ জন ইটালীয়, এক জন ভারতীয়, ২ জন বাংলাদেশি এবং এক জন বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক ছিলেন। এ ছাড়া জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হয়েছিলেন ২ জন পুলিশ অফিসার। গোটা হামলাটি আইএস-এর তৎকালীন মুখপত্র ‘দাবিক’-এর ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচার করেছিল জঙ্গিরা। পরে ভোর রাতের অভিযানে জঙ্গিরা সকলেই মারা যায় বলে দাবি করেছিল পুলিশ। জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০১৮-এ হোলি আর্টিজান বেকারির সামনে ‘দীপ্ত শপথ’ নামে ভাস্কর্যটি বসানো হয়। এতে দুই পুলিশ অফিসারের দৃপ্ত দু’টি মূর্তি ছিল। এই মূর্তি দু’টিকে বেদি থেকে ভেঙে বার করে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
অগস্টের ৫ তারিখে গণ অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী সরকারের আমলে এই সংগঠনটি বাংলাদেশে ঘাঁটি তৈরি করে। বেশ কিছু ইসলামি দেশের সঙ্গে ব্রিটেনেও হিজবুত তাহরির তাদের জঙ্গি মতাদর্শের কারণে নিষিদ্ধ। ২০০৯-এর ২২ অক্টোবর শেখ হাসিনা সরকার এই সংগঠনকে বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। হাসিনা সরকারের পতনের পরে ১০ অগস্ট হিজবুত তাহরির বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত মিছিল করে। প্রেস ক্লাবের সামনে তারা একটি পথসভাও করে। এ বার হোলি আর্টিজান হামলার স্মারক ধ্বংস করল তারা। এর আগে আর এক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা জসিমুদ্দিন রহমানিকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কোনও বিষয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা কোনও মন্তব্য করেননি। দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণেও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে জঙ্গিদের প্রকাশ্য আস্ফালনের বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি।
এর মধ্যেই শেখ হাসিনা সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন বাড্ডা থানায় গুলিতে এক যুবকের মৃত্যুর মামলায় তাঁর নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে পুলিশ ৮ দিন হেফাজতে চায়। বিচারক চার দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন।