হিজাব, বোরখা—কোনও কিছুরই ধার ধারেন না। আফগানিস্তানে খোলামেলা পোশাক পরে ঘোরাফেরা করতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাথা উঁচু করে গান করতেন।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে যে সব মেয়ে নারী স্বাধীনতার জন্য সওয়াল করেছিলেন এবং যাঁরা নিজেরা এগিয়ে এসে আফগান মেয়েদের পথ দেখিয়েছিলেন, আরিয়ানা সঈদ তাঁদেরই অন্যতম।
আফগানিস্তানের জনপ্রিয় পপ-তারকা তিনি। দেশের দু’টি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গেও কাজ করেছেন। একটি গানের অনুষ্ঠানে বিচারক হয়েছেন। আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অংশ তালিবরা দখলে নিয়ে নেওয়ার পর থেকেই জীবন বদলে যায় তাঁর। প্রাণ হাতে নিয়ে কোনওক্রমে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছেন তিনি।
আমেরিকার উদ্ধারকারী বিমানে বসে থাকার ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে অনুগামীদের চিন্তামুক্ত করেছেন। তার আগে পর্যন্ত বিনিদ্র রাতের অভিজ্ঞতা খুব তাড়াতাড়ি ভাগ করে নেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
জন্ম আফগানিস্তানের কাবুলে হলেও জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কখনও সুইৎজারল্যান্ডে কখনও লন্ডনে কাটিয়েছেন। সেই থেকেই পশ্চিমি ভাবধারায় বেড়ে ওঠা। আর লড়াকু মন পেয়েছেন মায়ের থেকে। তাঁর রক্তে মিশে রয়েছে তাজিক গোষ্ঠীর স্পর্ধা!
আরিয়ানার মা ছিলের তাজিব জনগোষ্ঠীর মানুষ। দশকের পর দশক ধরে এই তাজিকরাই তালিবদের বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিরোধ গড়ে তুলে আসছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্তও হিন্দুকুশ পর্বতের নীচে পঞ্জশির উপত্যকায় বসবাসকারী তাজিকদের মাথা নত করতে পারেনি তালিবান।
আরিয়ানা যখন আট বছরের, তখন মা-বাবার হাত ধরে পাকিস্তানের পেশোয়ারে চলে এসেছিলেন। তারপর সেখান থেকে সুইৎজারল্যান্ড। সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ঝোঁক দেখে ১২ বছর বয়সেই একটি মিউজিক স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন বাবা।
২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তানে প্রবেশ করেননি। ২০১১ সালে আফগানদের মধ্যে তাঁর ‘আফগান পেশারক’ গানের জনপ্রিয়তা দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার।
সেই থেকে আফগানিস্তানেই। তালিবানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পুরো দেশ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছুটে গিয়েছেন। ‘আফগানিস্তানের কণ্ঠ’ হিসাবে সমাদৃত হয়েছেন। সাহসিকতার জন্য ‘ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড’ও পেয়েছেন।
রবিবার তালিবানের দখলে কাবুল চলে আসার পর কয়েক রাত প্রাণ হাতে নিয়ে কাটিয়েছিলেন। বুধবার আমেরিকার উদ্ধারকারী বিমানে কাবুল ছাড়তে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। কাবুল থেকে দোহা এবং সেখান থেকে তুরস্কের ইস্তানবুলে আপাতত রয়েছেন তিনি।
নারী স্বাধীনতা এবং মেয়েদের অধিকার রক্ষার জন্য একাধিক কাজকর্মে নিযুক্ত ছিলেন আরিয়ানা। যার জন্য অনেকবার প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন। কিন্তু শরীরে বয়ে চলা উষ্ণ তাজিক রক্তস্রোত তাঁকে সমস্ত বাধা পেরিয়ে যেতে নিরন্তর সাহস জুগিয়ে গিয়েছে।
তাঁর অনুপ্রেরণায় অনেক মহিলাই এগিয়ে আসার সাহস দেখিয়েছিলেন। যেমন আফগান মহিলা ফুটবল জাতীয় দলের খেলোয়াড় নাদিয়া নাদিম। সম্পর্কে তাঁরই ভাইঝি নাদিয়া। ২০১৮ সালে নিজের ম্যানেজার হাসিব সঈদকে বিয়ে করেন আরিয়ানা। আপাতত স্বামীর সঙ্গেই দেশ ছেড়েছেন তিনি।
ভাগ্য জোরে আরিয়ানা দেশ ছাড়তে পারলেও সেখানে এখনও অনেক মহিলার ভাগ্য ঝুলে রয়েছে তালিবানের হাতে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা গভর্নর সালিমা মাজারির বাড়ি যেমন ঘিরে ফেলেছে তালিবরা।