প্রতিবাদ। ছবি: রয়টার্স।
সেনার চোখরাঙানি অগ্রাহ্য করেই আজ ফের ইয়াঙ্গনের রাস্তায় নামলেন হাজার হাজার মানুষ।
মায়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে গত সোমবার সেনাবাহিনী দেশের দখল নেওয়ার পর থেকেই ফুঁসছেন গণতন্ত্রকামীদের একাংশ। নয়া সেনা সরকারের বিরুদ্ধে একটু একটু করে বারুদ জমছিল সোশ্যাল মিডিয়াতেও। সেই ধাক্কা সামলাতে প্রথমে ফেসবুক ও পরে টুইটার, ইনস্টাগ্রাম নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল সেনা। এখন দেশের একটা বড় অংশে বন্ধ ইন্টারনেটও। এনএলডি-র নেত্রী তথা স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সু চি-সহ তাবড় নেতা-মন্ত্রীর মুক্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে তাই পথেই মানুষ। আজ বিকেলের পরে অবশ্য অনেকেই সেখানে ফোনে নেট পরিষেবা পেতে শুরু করেছেন বলে একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর।
কালকের মতোই আজ ফের ইয়াঙ্গনের রাস্তায় নজরে এল সার দেওয়া গাড়ির মিছিল। লাগাতার হর্ন আর স্লোগানে উত্তাল হল রাজপথ। বুকে সু চি-র পোস্টার সেঁটে বছর সাঁইত্রিশের মায়ো উইন যেমন সাফ বললেন, ‘‘এই মিলিটারি শাসন আমরা মানছি না। যত দিন না দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে পারছি, থামব না।’’
পরিস্থিতি সামাল দিতে কালকের চেয়ে বেশি সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ ছিল রাস্তায়। ছিল জলকামানও। যদিও দিনের শেষে সে ভাবে কোনও সংঘাতের খবর মেলেনি। সেনা-পুলিশকে দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে অবশ্য আগেই সতর্ক করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন। বিশেষ বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়েছিল, ‘‘মায়ানমারের সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দেখানোর অধিকারকে মর্যাদা দিতেই হবে। সেনা-পুলিশকে সংযত থাকতেই হবে।’’ প্রতিবাদ মিছিল থেকেই এক যুবক জানালেন, তাণ্ডব নয়, তাঁদের উদ্দেশ্য শুধুই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
গত নভেম্বরের ভোটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল সু চি-র দল। যদিও এর পিছনে কারচুপি রয়েছে বলে প্রথম থেকেই সুর চড়িয়ে আসছে মায়ানমারের সেনা। গত সোমবার নির্বাচনের পরে প্রথম সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। রাতারাতি সেনা অভ্যুত্থানে তা ভেস্তে গিয়েছে। দেশে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে সেনা। তার পরে নাকি ভোট হবে।
মায়ানমার সেনার এই দাবিকে কোনও ভাবেই মান্যতা দিতে চাইছে না রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। আটক কিংবা গৃহবন্দি নেতাদের মুক্তি চেয়ে আজ ফের সরব হয়েছে মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের অফিস।
কাল থেকে শুরু করে আজ বিকেল পর্যন্ত ইয়াঙ্গন, নেপিদ-র মতো বড় শহরে ইন্টারনেট বন্ধই ছিল। সকালে অবশ্য এরই মধ্যে একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, কেমন বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। সেনা-নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে কী ভাবে তা সম্ভব হয়, প্রশ্ন উঠেছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সেই ভিডিয়ো-গ্রাহকের খোঁজে চিরুনি-তল্লাশি শুরু করে দিয়েছে সেনা-পুলিশ।