স্টকহলমের নোবেল সংগ্রহশালা।
এখানকার মানুষজন বলেন ‘গামলাস্টান’। শহরের পুরনো এলাকাটার এটাই সুইডিশ নাম। সেই গামলাস্টানেই রয়েছে নোবেল সংগ্রহশালা। ২০০১ সালে, নোবেল পুরস্কারের শতবর্ষে, তৈরি করা হয়েছিল এই সংগ্রহশালা। নোবেল ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে বানানো এই সংগ্রহশালার প্রধান থিম— ‘একটা ধারণাই পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে’।
পুরস্কার ও পুরস্কারপ্রাপকদের নানা ‘গল্প’ লুকিয়ে রয়েছে এই সংগ্রহশালার আনাচেকানাচে। রয়েছে অসংখ্য ছবি, বিভিন্ন বছরের বিভিন্ন বিষয়ের পুরস্কারপ্রাপকদের দেওয়া নানা উপহার এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অসংখ্য নিদর্শন।
রেডিয়ো তরঙ্গ থেকে পেনসিলিন থেকে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি— কী নেই সেই আবিষ্কারের তালিকায়! শুধু অসংখ্য আবিষ্কর্তা ও বৈজ্ঞানিকরাই নন, রয়েছেন ‘কথার জাদুকর’ সাহিত্যে নোবেলজয়ীরা এবং অর্থনীতির পুরস্কারপ্রাপকেরা, যাঁদের চিন্তাধারা পাল্টে দিয়েছে পৃথিবীকে দেখার চোখ। নোবেল পুরস্কার ১৯০১ থেকে শুরু হলেও অর্থনীতিতে নোবেল অবশ্য দেওয়া শুরু হয়েছে ১৯৬৮ সাল থেকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিসপ্লে’। নিজস্ব চিত্র
বিজেতাদের সম্পর্কে জানতে হলে ভরসা সংগ্রহশালার ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিসপ্লে’। সেখানেই রয়েছে এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে নানা তথ্য। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর সম্পর্কে এই সংগ্রহশালায় লেখা রয়েছে, ‘‘অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাজা, অপূর্ব তাঁর কবিতা এবং কাব্যচিন্তা...।’’ রয়েছে ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী, আর এক বাঙালি অমর্ত্য সেন সম্পর্কেও বিভিন্ন তথ্য। দেখা যাবে নোবেল সংগ্রহশালায় তাঁর দেওয়া উপহার— একটি সাইকেল।
প্রথামাফিক নোবেল বিজেতারা এই সংগ্রহশালায় কিছু উপহার দেন। এ বছর অভিজিৎ উপহার দিয়েছেন উত্তর আফ্রিকার ঘানার এক দরিদ্র মহিলার বানানো কয়েকটি ব্যাগ। সে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি এ ধরনের হতদরিদ্র মহিলাদের নিয়োগ করে, তাঁদের সংসার চালাতে সামান্য রোজগারের ব্যবস্থা করে, সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত অভিজিৎদের ‘পভার্টি অ্যাকশন ল্যাব’। অর্থনীতির আর এক পুরস্কার প্রাপক, অভিজিতের স্ত্রী এস্থার দুফলো সংগ্রহশালায় দিয়েছেন ভারতীয় স্বেচ্ছাসেবী তথা প্রকাশক সংস্থা ‘প্রথম’-এর কিছু বই। বাচ্চাদের শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি।
অমর্ত্য সেন সম্পর্কে ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিসপ্লে’।
উপহার ছাড়াও নোবেলজয়ীরা প্রত্যেকে চেয়ারে সই করেন। এক একটি বিষয়ের জন্য এক একটি চেয়ার।
সেই চেয়ারগুলি একটি গোল টেবিলের চারপাশে উল্টো করে রেখে দেওয়া হয়। তা ছাড়া, সংগ্রহশালায় রয়েছে শিল্পী নিকলাস এলমেহেদের আঁকা এ বছরের বিজেতাদের স্কেচ।
বাঙালির বিশ্বজয়: মেয়ের সঙ্গে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। (ডান দিকে) নোবেল সংগ্রহশালায় নোবেলজয়ী। হাতে ঘানার এক দরিদ্র
মহিলার তৈরি কয়েকটি ব্যাগ। সেগুলি সংগ্রহশালায় দান করেছেন অভিজিৎ। স্টকহলমে। ছবি: নোবেল সংগ্রহশালার সৌজন্যে
১৯০৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন রুডইয়ার্ড কিপলিং। তাঁর লেখা ‘জাঙ্গল বুক’-এর প্রথম সংস্করণটি রয়েছে সংগ্রহশালায়। রয়েছে মাদার টেরিজা এবং দলাই লামার ছবিও। যথাক্রমে ১৯৭৯ এবং ১৯৮৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁরা। সংগ্রহশালায় খুঁজে পাওয়া যাবে সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজায়ি, তাঁর সঙ্গে পুরস্কার ভাগ করে নেওয়া ভারতীয় কৈলাস সত্যার্থী (২০১৪ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন মালালা ও কৈলাস) এবং ২০০৯ সালের রসায়নে নোবেলজয়ী ভারতীয় বেঙ্কটরামন রামকৃষ্ণনকে। তাঁদের সম্পর্কে জানতে এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখতে যে কেউ সংগ্রহশালায় যেতে পারেন।