এমএইচ ১৭ যেখানে ভেঙে পড়েছিল, সেই দুর্ঘটনাস্থলে মালয়েশিয়ার তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স।
চার দিনের চেষ্টার পর নিহত যাত্রীদের দেহ হাতে পেল ইউক্রেন সরকার। ইউক্রেন প্রশাসন জানিয়েছে, এ দিন সকালেই মৃতদেহ-বোঝাই ট্রেনটি খারকিভে এসে পৌঁছয়। অন্য দিকে, এমএইচ ১৭-র ব্ল্যাক বক্স দু’টিও এ দিন মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের দিয়েছে রুশপন্থী জঙ্গিরা। মালয়েশিয়া জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দল গঠন হয়ে গেলেই তাদের হাতে সেগুলি তুলে দেওয়া হবে।
১৭ ঘণ্টার সফর শেষে খারকিভ স্টেশনে ট্রেনটি যখন ঢোকে, তখন গোটা চত্বর লোকে লোকারণ্য। আমজনতা ছাড়াও হাজির ছিল সংবাদমাধ্যম। ইউক্রেন জানায়, প্রথমে দেহগুলিকে খারকিভের একটি অস্ত্র কারখানায় রাখা হবে। পরে সেখান থেকে দেহগুলি নেদারল্যান্ডসে পাঠানো হবে। সম্ভবত বুধবার নেদারল্যান্ডসে পৌঁছবে সেগুলি।
হঠাৎ নেদারল্যান্ডসে সব দেহ যাবে কেন? ইউক্রেন প্রশাসনের যুক্তি, এমএইচ-১৭-এ যে ক’জন যাত্রী ছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই ডাচ। পাশাপাশি, রুশপন্থী জঙ্গিদেরও শর্ত ছিল, নেদারল্যান্ডসেই পাঠাতে হবে দেহগুলি। এ দিন জানা গিয়েছে, সে দেশের হিলভেরসাম শহরে দেহ শনাক্ত করা হবে। কাজ শেষ হলে দেহগুলি যাত্রীদের পরিজনদের কাছে পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে নেদারল্যান্ডস।
তবে প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট্টে জানান, কয়েকটি দেহের অবস্থা এতই খারাপ যে সেগুলির শনাক্ত করতে মাসখানেকও সময় লাগতে পারে। সুতরাং দেহগুলি ঠিক কবে নাগাদ ফেরত পাবেন আত্মীয়রা, তা বলা যাচ্ছে না।
ইউক্রেনের হিসেব মতো এ দিন ২৮২টি দেহ এসে পৌঁছেছে। বাকি ১৬টি দেহের কী হল, তা অজানা। সব মিলিয়ে দেহ-ফেরত পর্বের প্রথম অধ্যায় নির্বিঘ্নে শেষ হলেও বাকিটা যে কবে হবে, তা নিয়ে ধন্দ থাকছেই।
তবে রুশপন্থী জঙ্গিদের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার বোরোদাই ব্ল্যাক বক্স দু’টি মালয়েশিয়াকে দিয়ে দেওয়ার পর সামান্য স্বস্তি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। কারণ প্রথম থেকেই ইউরোপ তথা পশ্চিমী দুনিয়ার দাবি, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সব রকম চেষ্টা করছে রুশপন্থী জঙ্গিরা।
এ দিনের পর তাদের আশা, শেষ মুহূর্তে এমএইচ-১৭ তে ঠিক কী ঘটেছিল তা হয়তো এ বার জানা যাবে। তবে সব প্রশ্নের উত্তর যে সেখান থেকে না-ও মিলতে পারে, সে আশঙ্কাও বেশ জোরালো।
সে আশঙ্কা সত্ত্বেও জঙ্গিদের কবল থেকে ব্ল্যাকবক্স দু’টি উদ্ধার করতে পেরে অবশ্য খুশি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাক। তিনি জানান, এ জন্য গোপনে জঙ্গিদের সঙ্গে দীর্ঘ কথাবার্তা চালিয়েছে তাঁর প্রশাসন।
দেহ ও ব্ল্যাক বক্স হস্তান্তরের পাশাপাশি, দুর্ঘটনাস্থলের ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করেছে রুশপন্থী জঙ্গিরা। এ দিন সেখানে পর্যবেক্ষণ চালান মালয়েশিয়ার বিস্ফোরণ-বিশেষজ্ঞরা। বহু ছবিও তোলা হয়। মোটের উপর রুশপন্থী জঙ্গিদের কোনও রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই এ দিন তদন্তের কাজ এগিয়েছে বলে খবর।
কিন্তু তা বলে ইউক্রেন সরকার ও রুশপন্থী জঙ্গিদের সংঘর্ষ থামছে না। এ দিনও ডনেৎস্কের লাগোয়া সেবেরোডনেৎস্ক শহর পুর্নদখল করেছে ইউক্রেন সেনাবাহিনী। ডনেৎস্কের ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে লিসিসানস্ক শহরে এখনও তীব্র সংঘর্ষ চলছে।