পাকিস্তানি তরুণী মালালা ইউসুফজ়াই-এর ‘যুদ্ধ জয়ের’ উপাখ্যান বিশ্বে এখন সুপরিচিত।
মেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে মুখ খোলায় তালিবানের ছোড়া গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছিল তাঁকে। এমন এক পরিবেশ থেকে উঠে আসা পাকিস্তানি তরুণী মালালা ইউসুফজ়াই-এর ‘যুদ্ধ জয়ের’ উপাখ্যান বিশ্বে এখন সুপরিচিত। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে এমন আরও অনেক কিশোরী রয়েছেন, যারা শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অসাম্যের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন, লড়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। এ বার তাঁদের কাহিনি তুলে ধরার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন মালালা। ঘোষণা করা হয়েছে, এমন ২৫ জন সাহসী কিশোরীর কাহিনি তুলে ধরা হবে একটি সঙ্কলনে। প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাবে মালালার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মালালা ফান্ড’। বইটির স্বত্ব পেয়েছে প্রকাশক সংস্থা ‘হারপারকলিন্স ইন্ডিয়া’।
১২ জুলাই মালালার জন্মদিন। তাঁর সাহসিকতাকে স্বীকৃতি দিয়ে এই দিনটিকে মালালা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ২৫ জন কৃতী কিশোরীদের নিয়ে পরিকল্পিত এই সঙ্কলনটির কথা ঘোষণা করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল এই দিনটিকেই। প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েদের স্কুলশিক্ষায় উৎসাহ দেওয়ার ভাবনা নিয়েই ‘মালালা ফান্ড’ শুরু করেছেন মালালা। সংগঠনের ডিজিটাল মুখপত্র ‘অ্যাসেম্বলি’-র সম্পাদক টেস টমাসের কথায়, ‘‘যে-সব কিশোরীরা সামাজিক বৈষম্য কিংবা সাম্প্রদায়িক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে শিক্ষার অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে এবং আগামী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করছে, তাদের কাহিনি তুলে ধরা হবে এই সঙ্কলনে। সাম্য এবং শিক্ষা সম্পর্কিত তাঁদের নিজেদের লেখা প্রতিবেদনও থাকবে সেখানে।’’ এখনও পর্যন্ত সঙ্কলনটির নাম ঠিক না হলেও জানানো হয়েছে, আগামী বছরের মধ্যেই প্রকাশিত হবে সেটি।
হারপারকলিন্স ইন্ডিয়ার তরফে প্রকাশক কৃষ্ণন চোপড়ার মতে সঙ্কলনটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেদের তুলনায় তারা কোনও অংশে কম নয়, তা সত্ত্বেও করোনা পরিস্থিতির জেরে বহু কিশোরীর স্কুলে যাওয়ায় ইতি পড়ার আশঙ্কা সত্যি হতে চলেছে। যে কারণে এই সময়ে এই সঙ্কলনটি প্রকাশের কথা ঘোষণা করতে পারায় আমরা বিশেষ খুশি।’’ বইটির সম্পাদক অনন্যা বর্গোহেনের কথায়, ‘‘এই সময়ে দাঁড়িয়ে ওই ২৫ জন কিশোরীর গল্প অনেককে শুধু সাহসই জোগাবে না, শিক্ষা সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্যের হদিসও পাওয়া যাবে এই বইয়ে।’’
আরও পড়ুন: চিনের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে না-ও দাঁড়াতে পারে আমেরিকা, সন্দিহান বোল্টন
শিক্ষার অধিকারের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর তালিবানের রোষের মুখে পড়ে গুলিতে জখম হন মালালা। যদিও ওই ঘটনা একচুলও দমাতে পারেনি তাঁকে। বরং তিনি লড়াইয়ে ফিরেছিলেন দ্বিগুণ উদ্যমে। গত মাসেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি নিয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন তিনি। যদিও এর অনেক আগে থেকেই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধকে সম্মান জানিয়ে একের পর এক পুরস্কার এসে পড়েছে তাঁর ঝুলিতে। ছোটবেলা থেকেই শিশু অধিকার নিয়ে সরব ছিলেন তিনি। যাঁর স্বীকৃতি হিসেবে মাত্র ১৭ বছর বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন এবং কনিষ্ঠতম নোবেলজয়ী হিসেবে ইতিহাস রচনা করেছেন। গত বছর ‘দ্য মোস্ট ফেমাস টিনেজার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ উপাধিতেও মালালাকে ভূষিত করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।