মালালা ইউসুফজাই। ফাইল চিত্র।
মৃত্যুর তাড়া খেয়ে যে দেশ ছেড়ে তাঁকে চলে যেতে হয়েছিল পাঁচ বছর আগে, সেই পাকিস্তানের মাটিতে আবার পা দিলেন মালালা ইউসুফজাই। বুধবার মালালাকে নিয়ে এমিরেটসের বিমান যখন ইসলামাবাদে বেনজির ভুট্টো বিমানবন্দেরর মাটি স্পর্শ করে, তখন রাত প্রায় পৌনে দুটো। যে পোশাকে পাকিস্তানের মানুষ তাঁকে দেখতে অভ্যস্ত, মালালার পরনে তখন সেই চেনা-পরিচিত সালোয়ার কামিজ। আর দোপাট্টা। আর এর মধ্যে দিয়েই যেন একটি বৃত্ত সম্পূর্ণতা পেল।
২০১২ সালে তালিবান বন্দুকবাজের হামলায় জখম হয়ে প্রায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে গিয়েছিলেন মালালা। চিকিত্সার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ব্রিটেনে। দীর্ঘ চিকিত্সায় সুস্থ হয়ে ফের মালালা পিছিয়ে থাকা দেশের সমস্ত অল্পবয়সীর শিক্ষার দাবিতে সরব হয়েছেন।
বিশ্বে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী। শিশুদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনের জন্য যখন মালালার হাতে নোবেল পুরস্কার উঠেছিল, সেই সময় তাঁর বয়স মাত্র ১৭। পাঁচ বছর আগে যখন দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, সেই সময় মালালা ছিলেন প্রতিবাদী এক কিশোরী। সেই মেয়ে ফিরে এল ‘আইকন’ হয়ে।
আরও পড়ুন: পাক প্রধানমন্ত্রীকে কোট-বেল্ট খুলিয়ে তল্লাশি মার্কিন বিমানবন্দরে
মালালার সঙ্গে পাকিস্তানে এসেছেন তাঁর বাবা-মা। জানা গিয়েছে, দিন চারেক তাঁরা পাকিস্তানে থাকবেন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে, তাঁদের কোথায় রাখা হয়েছে তা জানানো হয়নি। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খকন আব্বাসির সঙ্গে মালালার সাক্ষাত্ হবে বলে জানা গিয়েছে। কথা হতে পারে পাক সেনাপ্রধানের সঙ্গেও। ‘মিট দ্য মালালা’ নামের একটি অনুষ্ঠানেও তাঁর যোগ দেওয়ার কথা।
কিন্তু তাঁর নিজের জন্মস্থান সোয়াত? মেয়েদের মধ্যে শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যখন নিজের বাবার সঙ্গে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় আন্দোলনে নামেন মালালা, সেই সময় তাঁর বয়স মেরেকেটে ১১। কিন্তু সাধারণ মানুষের চোখে যা সমাজ সংস্কার, সেটাই তো তালিবান বাহিনীর কাছে অপরাধ! তাদের বক্তব্য, ‘এই মেয়ে পশ্চিমি দেশগুলোর দালাল।’
আরও পড়ুন: পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে রাজি, চিনে প্রতিশ্রুতি কিমের
২০১২ সালের ৯ অক্টোবর। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্কুলবাসের মধ্যেই তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালায় তালিবানি বন্দুকবাজ। রক্তাক্ত সেই স্মৃতি নিয়েও মাস খানেক আগে এক মার্কিন ‘টক শো’-এ তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমার দেশ বদলানোর জন্য মুখিয়ে রয়েছে। আমি অন্তত এক বারের জন্য দেশের মাটি স্পর্শ করতে চাই।’’
মালালার সেই আশা পূরণ হল অবশেষে। পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন একটাই আলোচনা- ‘মালালা’। কিন্তু মালালাকে কি সোয়াতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে? জানা নেই। কারণ মাঝের ক’টা বছরে অনেক কিছু বদলালেও, তালিবান বাহিনী কিন্তু বদলায়নি। এখনও মালালা তাদের কাছে শত্রু।