হুয়ান রুলফোর ‘পেদ্রো পারামো’ উপন্যাসটা মনে আছে? ঔপনিবেশিক সভ্যতার উচ্ছ্বিষ্টভোগী লাতিন আমেরিকা সেই গ্রাম কোমালা। যেখানে হাঁটতে হাঁটতে হুয়ান প্রেসিয়াদো আবিষ্কার করেছিলেন মৃত্যুভূমিতে এসে পৌঁছেছেন তিনি। মৃতদের হাহাকার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধুলো মাখা কোমালা। দক্ষিণ সুদানের মালাকাল গ্রামে গেলে আপনার চোখের সামনে জেগে উঠবে কোমালা। একদা ব্রিটিশ উপনিবেশ মালাকালে আজ রুক্ষ নিম গাছের সারি। যার বীজ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভারত থেকে। গাছের ছায়ায় সার বাঁধা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসা কয়েকটা মুখ। চেহারায় বেকারত্বের ছাপ স্পষ্ট। স্থানীয় সংবাদ পত্রের পাতা থেকে গুরুতর বিষয় খুঁজে নিয়ে তর্কের রসদ জোগাতে তারা মরিয়া। আর আছে শুধুই অপেক্ষা।
এই মালাকালে গিয়ে পৌঁছে ছিলেন সাংবাদিক টিম ফ্রাঙ্ক। তিনিই এখানে কোমালার প্রেসিয়াদোর ভূমিকায়। গাছতলায় বসা সারি বাঁধা মুখের একজন ৫১ বছরের ভিক্টর লাজার তার সামনে তুলে ধরেছেন মালাকালের গল্প। খোলা পাতার মতো সেই কাহিনি। তবু যেন রহস্যের ঘেরোটোপ আচ্ছন্ন করে রাখে।
এক সময় সরকারি অফিসার ছিলেন ভিক্টর। গৃহযুদ্ধের সময় পালিয়ে যান। কিন্তু যুদ্ধ থামার পর ফিরে আসেননি কেন? অতি স্বাভাবিক সাংবাদিক কৌতূহলের জবাবটাও ছিল হাড়কাঁপানো স্বাভাবিক। ‘‘মালাকালের কথা জানো না? শুধু ছাই’’, শান্ত গলায় উত্তর দিয়েছিলেন ভিক্টর।
গরম কালে সূর্যের তেজ আর মশার মেঘ মাথায় নিয়ে বাঁচে মালাকাল। বর্ষায় কাদা আর মানুষের বিষ্ঠায় মাখামাখি মাটিতে অভ্যস্থ পা ফেলা। তার মাঝেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে রিফিউ়জি ক্যাম্প, তাঁবু, ছাউনি ঘর। প্রতিদিন আসছে নতুন মানুষ। জ্বালানি, রসুন আর টুকরো বেচে চোখে এক রাশ শূন্যতা নিয়ে বেঁচে থাকে মালাকাল। ভবিষ্যত্ যেখানে আশার আলোর আবছা আভাসটুকুও দেয় না সেখানে যেন অতীতের ক্ষতও শুকোতে চায় না। রসুন বেচা মানুষগুলো তাই ধূ ধূ প্রান্তরে আজও শুনতে পায় মৃত মা, ভাইয়ের হাহাকার। সব হারানোর যন্ত্রনা।
যুদ্ধের সময় বারো বার হাত বদল হয়েছে মালাকাল। রাজায় রাজায় যুদ্ধের মাঝে উলুখাগড়া হয়ে বেঁচে রয়েছে মালাকাল।
নতুন নতুন মিলিটারি ক্যাম্প, রেড ক্রস অফিসের ভাঙা গড়ার মাঝে আজও নিজের অস্তিত্ব হাতড়ে বেড়াচ্ছে মালাকাল।
কোমালা কথার অর্থ গনগনে চাটু। মালাকাল কথার অর্থ কী? জানা নেই।