হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।—ছবি এএফপি।
আমেরিকার অহিংস আন্দোলনের পথপ্রদর্শক ছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী—ভারত-মার্কিন কৌশলগত সম্পর্ক সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে এমন কথাই শোনা গেল হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির মুখে। মার্কিন নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম মুখ মার্টিন লুথার কিং (জুনিয়র)-এর উপরে গাঁধীর প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন ন্যান্সি। গাঁধীর পাশাপাশি তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে প্রশংসাও।
ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহী পেলোসি বলেছেন, তিনি নিজে গাঁধীর মতাদর্শে বিশ্বাসী। সত্যাগ্রহ বলতে তিনি দু’টি জিনিস বোঝেন। ন্যান্সির কথায়, ‘‘অহিংসা এবং সত্যের উপরে জোর। মার্টিন লুথার কিং ঠিক সেটাই করেছিলেন—অহিংস পথে সত্যে অটল থাকা। এই যে ভাবনা ভারত আমাদের উপহার দিয়েছে, সেটাই ভারতের সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।’’
হাউস স্পিকার জানিয়েছেন, গাঁধী সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ স্কুলে পড়ার সময় থেকে। ‘‘যখন ছোট ছিলাম, আমার ক্যাথলিক স্কুলে গিয়েছিলাম মাথায় একটা টুপি পরে। সন্ন্যাসিনী আমায় বলেছিলেন, তুমি নিজেকে কী ভাব? মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী? আমার তখন কোনও ধারণাই ছিল না, যে গাঁধী কে! তার পরে লাইব্রেরি গিয়েছিলাম। ১৯৫০-এর সেই সময়ে গাঁধীর উপরে শিশুদের জন্য বই ছিল ওখানে।’’ ন্যান্সি জানিয়েছেন, কলেজে পড়ার সময় লাইব্রেরি থেকে গাঁধী সংক্রান্ত সব বই এনে পড়েছিলেন। সেই সময়ের একটি অভিজ্ঞতাও অনুষ্ঠানে বলেছেন ন্যান্সি। ‘‘লাইব্রেরিতে এক দিন হঠাৎ শাড়ি পরা এক সতীর্থ আমায় এসে বললেন, তুমি দেখছি গাঁধীর উপরে সব বই নিয়ে ফেলেছো। আমার বাবা আমেরিকায় পাকিস্তানের দূত হিসেবে কাজ করেন। জিন্না সংক্রান্ত সব বইও এ বার তোমায় পড়তে হবে!’’ কথা শেষ না-হতেই হাসির রোল শ্রোতাদের মধ্যে।
এর পরেই ন্যান্সির মুখে শোনা যায় মোদীর স্তুতি। মোদীর জনসংযোগের ক্ষমতার প্রশংসা করে কয়েক বছর আগে সিলিকন ভ্যালিতে দেওয়া মোদীর বক্তৃতা প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, ‘‘আবেগতাড়িত সেই ভঙ্গি দেখার মতো ছিল।’’ এর পরে ন্যান্সি নয়াদিল্লিতে মোদীর বক্তৃতার কথা জানান, যেটি তাঁর মতে, অতীতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলে না। সেখানে মোদীর শান্ত ও আধ্যাত্মিক সত্তা দেখেছিলেন তিনি। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া মোদীর বক্তৃতারও তারিফ করে ন্যান্সি বলেন, ‘‘আমার শোনা অন্যতম সেরা বক্তৃতা।’’ শোনা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বরে মোদী আমেরিকায় যেতে পারেন।
তবে ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রতি কেন্দ্রে মোদী সরকারের আচরণ নিয়েও যে মার্কিন কংগ্রেস উদ্বিগ্ন, সে কথাও এ দিন ভারত-মার্কিন কৌশলগত সম্পর্ক বিষয়ক অনুষ্ঠানে জানান হাউস স্পিকার ন্যান্সি।