স্ত্রী ব্রিজিত ত্রনিওর সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ইমানুয়েল মাক্রঁ
এক সময় রাজনীতির জগতে তাঁকে নিয়ে জোর ঠাট্টা চলত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শেষ হাসি হাসতে পারেন তিনিই!
ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ে মধ্যপন্থী নবাগত মুখ ইমানুয়েল মাক্রঁ এখন আলোচনার কেন্দ্রে। চূড়ান্ত লড়াইয়ে অতি দক্ষিণ প্রার্থী মেরিন ল্য পেনের মুখোমুখি হতে হবে ৪০-ও না ছোঁয়া এই তরুণ নেতাকে। কূটনীতিকরা বলছেন, দুর্নীতির অভিযোগের জেরে কনজারভেটিভ প্রার্থী ফ্রাঁসোয়া ফিলঁ ব্যাকফুটে চলে গিয়ে অনেকটাই সুবিধা করে দিয়েছেন মাক্রঁকে। আর ৭ মে, চূড়ান্ত লড়াইয়েও তিনি ফের সুবিধেজনক অবস্থানে থাকতে পারেন। কারণ, ল্য পেনের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার ডাক দিচ্ছে ফ্রান্সের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তাঁর হয়ে সওয়াল করেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাঁদ। লড়াই থেকে ছিটকে গিয়ে ফিলঁ বা অতি বাম জঁ-লুক-মিলশোঁ এখন চাইছেন, যেন তেন প্রকারেণ ঠেকাতে হবে ল্য পেনকে।
অভিবাসী-বিরোধী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিরোধী ল্য পেন প্রেসিডেন্টের পদে জিতে এলে অর্থনৈতিক ভাবে কোণঠাসা ফ্রান্সে খুব ভাল কিছু হতে পারে না— দৃ়ঢ় বিশ্বাস অনেকেরই। ২৩.৯% ভোট পেয়ে প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে রয়েছেন মাক্রঁ। তাই এখন তুরুপের তাস ইইউ-পন্থী এই যুব নেতাই। মাত্র ৩৯ বছর বয়সে সে অর্থে কোনও বড়সড় রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়াই যিনি উঠে এসেছেন ধূমকেতুর মতো। ফিলঁ তাঁর সম্পর্কে এক সময় বলেছিলেন, ‘‘কোনও অভিজ্ঞতা নেই এমন একটা মানুষের উপরে কিছুতেই ফরাসি নাগরিকরা ভরসা করবেন না।’’ কিন্তু আম জনতা সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ বার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর উপরে তাঁরা আস্থা রাখছেন না।
প্রাক্তন সরকারি কর্মী মাক্রঁ অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই কোটিপতি ব্যাঙ্ক-কর্তা হয়েছিলেন। ওলাঁদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। তবে সেই সময়ে বিতর্ক কিছু কম হয়নি। উদারপন্থী কিছু সংস্কারের জেরে সরকারের অন্দরেই বিরাগভাজন হন তিনি।
এক সময়ে সোশ্যালিস্ট পার্টির সদস্য হলেও ২০০৯ সাল থেকে নির্দল রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করতে করতে মাক্রঁ গত বছর এপ্রিলে নিজের দল গড়েন, অঁ মার্শ। নিজেকে বলেন ‘প্রতিষ্ঠান-বিরোধী’। সদস্য সংখ্যা দু’লক্ষ। তিনি বা তাঁর দল— দু’ই-ই তাই ফরাসি জনতার কাছে বেশ তরতাজা। জনকল্যাণ এবং পেনশন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
মাক্রঁর উত্থানের মতোই চমকপ্রদ তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও। ১৭ বছর বয়সে নিজের চেয়ে ২৫ বছরের বড় হাইস্কুল শিক্ষিকা, তিন সন্তানের জননী বিবাহিতা ব্রিজিত ত্রনিওকে বলেছিলেন, জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, ওঁকেই বিয়ে করবেন। নিজের সেই কথা রেখেছেন ২০০৭ সালে এসে। নির্বাচনের প্রচার-পর্বে আগাগোড়াই পাশে পেয়েছেন ব্রিজিতকে। গত মাসেই এক বক্তৃতায় মাক্রঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি যদি জিতি, না, দুঃখিত আমরা যদি জিতি, ও থাকবে একটি বিশেষ ভূমিকায়।’’