লন্ডন বইমেলা।
আতঙ্কের আবহে দিন তিনেক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্যারিসের লুভ্র মিউজিয়াম। এ বার সংক্রমণের আশঙ্কায় লন্ডনের বইমেলাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই বইমেলা হওয়ার কথা ছিল আগামী ১০ থেকে ১২ মার্চ। শুধুমাত্র মেলা উপলক্ষে কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষের জমায়েত হওয়ার কথা ছিল পশ্চিম লন্ডনে। কিন্তু বিশ্বের নানা প্রান্তে যে গতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, এত সংখ্যক লোক এক জায়াগায় জড়ো হওয়া আদৌ সুরক্ষিত নয় বলে মনে করছে ব্রিটিশ সরকার। তাই আগেভাগেই মেলা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রিটেনে ৩৪ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। ফলে আক্রান্তের মোট সংখ্যাটা এখন ৮৫।
লুভ্র কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা আজ থেকে ফের মিউজিয়াম খোলা রাখছেন। যে কর্মীদের আপত্তিতে মিউজিয়াম বন্ধ রাখা হয়েছিল, তাঁরা ফের কাজে ফিরেছেন। ফরাসি সরকারও জানিয়েছে, ফ্রান্সের পরিস্থিতি এখন অতটা উদ্বেগের নয় যে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই মিউজিয়াম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখতে হবে।
তবে লুভ্র খুললেও গোটা বিশ্বের ছবিটা ততটাও স্বস্তিদায়ক নয়। ইরান, ইটালি আর দক্ষিণ কোরিয়ায় হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ আর মৃত্যুর সংখ্যা। ইরানে ৯২ জন এই ভাইরাসের হানায় মারা গিয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজারের কাছাকাছি। ইটালিতেও মারা গিয়েছেন ১০০ জনের বেশি। আগামী দু’সপ্তাহের জন্য দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হবে বলে ফের জানিয়েছে ইটালি সরকার। দক্ষিণ কোরিয়ায় মৃতের সংখ্যা গত কাল রাত পর্যন্ত ৩২ জন। আমেরিকাতেও মারা গিয়েছেন ৯ জন। জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী এই সংক্রমণ যে ভাবে ছড়াচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তারা অবশ্য এখন পরিস্থিতি ততটা ভয়ঙ্কর (প্যানডেমিক) নয় বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। তবু প্রতিটি দেশকেই সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ১২০০ কোটি ডলার ত্রাণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
চিলে, পোলান্ড এবং আর্জেন্টিনায় প্রথম সংক্রমণের খবর মিলেছে। সেই সঙ্গে স্পেন আর ইরাক থেকে মিলেছে প্রথম মৃত্যুর খবর। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, দেশের বাইরে মোট ১৭ জন ভারতীয় এই ভাইরাসে আক্রান্ত।
ইরানের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে শুক্রবার করে মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়া এখন বন্ধ রাখতে হয়েছে প্রশাসনকে। সেখানকার জেলগুলিতেও মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। সংক্রমণ রুখতে প্রায় ৫৪ হাজার বন্দিকে সাময়িক ভাবে মুক্তি দেওয়ার কথা ভেবেছে সরকার। সংক্রমণের ভয়ে মক্কায় যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সৌদি সরকার।
অস্ট্রেলিয়ার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। সেখানে ইতিমধ্যেই এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৪০। আক্রান্ত দেশগুলি থেকে অস্ট্রেলিয়া প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে সে দেশের সরকার। এর মধ্যেই গোটা দেশে টয়লেট পেপার কিনে রাখার ধুম পড়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন যে, টয়লেট পেপার কেনার উপরে কড়াকড়ি করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।
চিনে অবশ্য সংক্রমণের হার অনেকটা কম। গড়ে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। এখনও পর্যন্ত সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২,৯৪৩ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজারের কাছে। গোটা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৩,১৫৫। আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে।