চলছে ইমপিচমেন্ট শুনানি।—ছবি এপি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইমপিচ করার জন্য তদন্ত-প্রক্রিয়া টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা শুরু হল। আজ, বুধবার ও শুক্রবার এই তদন্ত প্রক্রিয়া সরাসরি দেখানো হবে টিভিতে। তবে আগামী সপ্তাহেও এই সম্প্রচার চলতে পেরে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউক্রেনের উপর চাপ দিয়ে ডেমোক্র্যাট নেতা এবং ২০২০-র আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর সব থেকে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প, এই মর্মে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে হাউসে। এই প্রথম সেই শুনানি টিভিতে দেখানো হবে। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাজ করছেন। তাই এই সরাসরি সম্প্রচার দেখছেন না তিনি!
শুনানির নেতৃত্বে রয়েছেন হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফ। স্থানীয় সময় বুধবার সকাল দশটা থেকে এই শুনানি টিভিতে দেখানো শুরু হয়েছে। টিভিতে সম্প্রচারের প্রস্তাব এনেছিল ডেমোক্র্যাটরাই। এখন তাদেরই দখলে হাউস। ডেমোক্র্যাটদের ইচ্ছে, এই তদন্ত-শুনানির সম্প্রচার করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিপুল জনমত গঠন করা। আমেরিকার সাধারণ মানুষকে দেখানো, হোয়াইট হাউসের মসনদে যিনি বসে আছেন, তিনি ‘ক্ষমতালোভী’, নিজের পদের ‘অপব্যবহার’ করতে তিনি পিছপা হন না। ডেমোক্র্যাটদের আশা, এ ভাবে যদি জনমত গঠন করা যায়, তা হলে প্রেসিডেন্টকে সত্যিই ইমপিচ করার পথ অনেকটাই সুগম হবে। কারণ তদন্ত-শুনানির পরে শেষ পর্যন্ত যদি ইমপিচ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা হলে সেই প্রক্রিয়া আর হাউসে হবে না, হবে সেনেটে। এবং ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকানদের দখলে রয়েছে সেনেট। এর আগে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট-শুনানিও দেখানো হয়েছিল টিভিতে।
এই শুনানিতে ইতিমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ডজন খানেক কূটনৈতিক ও আধিকারিক। আজ সাক্ষ্য দিচ্ছেন ইউক্রেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়ান টেলর এবং বিদেশ দফতরের এক শীর্ষকর্তা জর্জ কেন্ট। টিভি-শুনানি শুরুর আগে শিফ সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘সাক্ষীরা যা যা বিবৃতি দিয়েছেন, তার উপরে নির্ভর করে বলা যায় ইমপিচ করার মতো বেশ কিছু অপরাধ রয়েছে তালিকায়।’’ শিফের মতে, ট্রাম্প নিরাপত্তার খাতে রাখা অর্থ অন্যায় ভাবে ব্যবহার করে ইউক্রেনের উপরে চাপ তৈরি করেছিলেন যাতে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করানো যায়— এই অভিযোগটির উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে ইমপিচ-তদন্তে। এই সময়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিকে ফোন করে তাঁকে একই কথা বলেন ট্রাম্প। শিফ বলেছেন, ‘‘এই ধরনের পদক্ষেপ করেন যে প্রেসিডেন্ট, তাঁকে যদি ইমপিচ করা না হয়, তা হলে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের কাছে কী বার্তা যাবে?’’
শিফের দাবি, বাইডেনের পরিবারের বিরুদ্ধে ‘ভুয়ো তদন্ত’ রুখতে যা করার দরকার, তিনি করবেন। ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার পরিবর্তে হস্তক্ষেপ করেছিল ইউক্রেন— এমন মিথ্যে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দিয়ে ইমপিচমেন্ট শুনানি যাতে বেপথে চলে না যায়, সেটাও দেখবেন তিনি। শিফ আগে থেকেই হাউস কমিটি সদস্যদের জানিয়েছেন, রিপাবলিকানরা বাইডেনের ছেলে হান্টারকে শুনানিতে ডাকতে পারবেন না। ডাকা যাবে না সেই হুইসলব্লোয়ারকেও, যিনি জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্প ফোন করেছিলেন। হাউসে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় শিফ সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন, কোন সাক্ষীকে শুনানিতে ডাকা হবে, আর কাকে ডাকা হবে না।