জাকিউর রহমান লকভি
জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার অপারেশন কমান্ডার জাকিউর রহমান লকভিকে শনিবার গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রশাসন। পঞ্জাব প্রদেশ পুলিশের জঙ্গি-বিরোধী শাখা (সিটিডি) জানিয়েছে, মুম্বই হামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত এই জঙ্গি নেতাকে সন্ত্রাসে অর্থ জোগানোর একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। কোথা থেকে কী ভাবে তাঁকে আটক করা হয়েছে, পুলিশ তা না-জানালেও সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রীতিমতো অভিযান চালিয়ে লকভিকে ধরেছে সিটিডি। লাহৌরের উপকণ্ঠেই গা-ঢাকা দিয়ে ছিল সে।
তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার নেতা হিসেবেই নয়, ২০০৮-এর ডিসেম্বরে ব্যক্তিগত ভাবেও লকভিকে ‘ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ২০০৮-এর মুম্বই বিস্ফোরণের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত লকভিকে পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক চাপে গ্রেফতার করলেও বেশি দিন কারাগারে রাখতে পারেনি। এই হামলায় ১৬৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ২০১৫-য় জামিন পায় লকভি। পুলিশের দাবি অনুযায়ী তার পর থেকে সে ফেরার। যদিও লকভির মতো জঙ্গি নেতাদের পাকিস্তান প্রশাসনই নিরাপত্তা দিয়ে আড়ালে রাখে বলে অভিযোগ। এ জন্য আন্তর্জাতিক চাপ যথেষ্ট বেড়েছে ইসলামাবাদের উপরে। সন্ত্রাসে অর্থ সাহায্য বন্ধে নিশ্চেষ্টতার অভিযোগ তুলে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় রেখেছে প্যারিসের সংগঠন এফএটিএফ। কালো তালিকা থেকে বাঁচতে ইমরান খান সরকার লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ দিল্লির। লকভির গ্রেফতারও সে রকমই কিছু বলে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের দাবি।
কাশ্মীরে সন্ত্রাস রফতানির প্রধান সন্দেহভাজন এই লকভি। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে প্রশিক্ষণের পরিকাঠামো পরিচালনা থেকে সীমান্ত পার করে জঙ্গিদের ভারতে পাঠানো, ভারতের মাটিতে নাশকতার পরিকল্পনা— লস্করের সামরিক প্রধান হিসেবে সব কিছুরই প্রধান দায়িত্ব জাকিউর রহমান লকভি পালন করে বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের। জঙ্গি কার্যকলাপ আড়াল করার জন্য বরাবরই সে ধর্মীয় সেবামূলক কাজের ভড়ং করে বলে অভিযোগ দিল্লির। সে জন্য গোটা বিশ্ব থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে তার সংগঠন সন্ত্রাসের কাজে লাগায়— ভারত বরাবর এই অভিযোগ করে এসেছে। পঞ্জাব পুলিশের বিবৃতিতে লকভির বিরুদ্ধে যে নতুন অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে এই অভিযোগের মিল রয়েছে। সিটিডি-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসে অর্থ সাহায্যের একটি মামলায় লকভিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে একটি ডিসপেনসারি চালায়। অভিযোগ সেই ডিসপেনসারির জন্য বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে সে জঙ্গি কার্যকলাপে ব্যবহার করে। নিজেও সেই টাকার কিছুটা আত্মসাৎ করে।’ লাহৌরের সন্ত্রাস-বিরোধী আদালতে লকভিকে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
লকভি যে লস্কর-ই-তইবার নেতা এবং আল কায়দার সহযোগী, পুলিশের জঙ্গি-বিরোধী শাখার বিবৃতিতে তা উল্লেখ করা হয়েছে— যেটিকে ভারতীয় গোয়েন্দারা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। কারণ, হাফিজ সইদ বা লকভির মতো জঙ্গি নেতাদের বিরুদ্ধে ভারত অভিযোগ করলেই পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিরা দাবি করে, এরা ধর্মীয় নেতা এবং নানা ধরনের সেবামূলক কাজে যুক্ত। ভারত বরাবর বলে এসেছে, পাকিস্তানে প্রভাবশালী সেনাবাহিনী এবং সামরিক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই লকভি-হাফিজদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক। কাশ্মীরে সন্ত্রাস সরবরাহ থেকে বিভিন্ন জায়গায় নাশকতার কাজে এদের সংগঠনকেই কাজে লাগায় আইএসআই। সেই সব জঙ্গি সংগঠনের পিছনে সেনাবাহিনী যেমন বিপুল অর্থ ব্যয় করে, তাদের নেতাদের সুরক্ষিত আশ্রয়েরও ব্যবস্থা করে। বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্র বলছেন, তড়িঘড়ি মন্তব্য না-করে পরিস্থিতির উপরে তাঁরা নজর রাখছেন। তবে পাকিস্তানের এই নাটক নতুন নয়। পাকিস্তান যখন আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে, তখন আশ্রিত জঙ্গিদের গ্রেফতার দেখিয়ে বিশ্বকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে। আন্তর্জাতিক চাপ একটু কমলেই আবার ‘ফেরার’ হয়ে যায় এই সব জঙ্গি নেতা।