৫৫ হাজার ২৮৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত কানাডার একটি দ্বীপ, ওক। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এই দ্বীপে। এই দ্বীপে মাটির অনেক গভীরে নাকি লুকনো রয়েছে বিপুল ধনসম্পদ।
এই ‘লুকনো’ সম্পদের লোভে প্রাণ গিয়েছে বহু মানুষের। কিন্তু আজ পর্যন্ত রহস্যের সমাধান কেউ করতে পারেননি। উদ্ধার হয়নি গুপ্তধনও। রহস্য বুকে চেপে শত শত বছর ধরে একই ভাবে টাকার ফাঁদ পেতে রয়েছে এই দ্বীপ, ওক আইল্যান্ড।
এই রহস্যের শুরু ১৭৯৫ সালে। ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, ড্যানিয়েল ম্যাকগিনিস নামে এক যুবক এই দ্বীপে আলো জ্বলতে দেখেছিলেন। সেই আলোর উত্স খুঁজতে খুঁজতে পর দিন দ্বীপের একটা অংশে পৌঁছে দেখেন, সেখানে রয়েছে ১৩ ফুট পরিধির এক বিশাল গর্ত। গর্তের আশেপাশের ওক গাছগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে।
সে দিনই ম্যাকগিনিস বুঝে ফেলেছিলেন, রহস্যজনক, মূল্যবান কিছু লুকিয়ে রাখা হয়েছে এই দ্বীপে। পরদিন আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে ফিরে এসে জায়গাটা খুঁড়তে শুরু করেন।
ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, এমন হতে পারে যে, তখন জলদস্যুরা লুঠ করা যাবতীয় সম্পত্তি এই দ্বীপে লুকিয়ে রেখেছিল। তবে সেটা কতটা, তার প্রমাণ আজও মেলেনি। ওক আইল্যান্ডে বিছিয়ে রাখা সম্পদের ফাঁদে পড়ে একাধিক মানুষের প্রাণ গিয়েছে শুধু।
সে দিন ম্যাকগিনিস এবং তাঁর বন্ধুরা মাটির দু’ফুট নীচে একটা বড় পাথর দেখতে পান। উত্তেজনার সঙ্গে সেই পাথরটা টেনে বার করেন তাঁরা। কিন্তু তার নীচে কোনও গুপ্তধন ছিল না।
ফের খোঁড়া শুরু হয়। যত নীচে নামা হচ্ছিল, গর্তটা ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। ৭ ফুট নীচে তাঁরা প্রথম আশার আলো দেখতে পান। গর্তের দেওয়ালে মানুষের কুড়ুলের ছাপ দেখতে পান ম্যাকগিনিসরা। তাঁরা যে ঠিক পথেই এগোচ্ছেন, তা বুঝতে পারেন। গুপ্তধন উদ্ধারে আরও দৃঢ় হয়ে যান।
এই ভাবে খুঁড়তে খুঁড়তে ৩০ ফুট গভীর গর্ত করে ফেলেন তাঁরা। কিন্তু প্রতি ১০ ফুট অন্তর গাছের গুড়ির স্তর আর মাটি ছাড়া কিছুর উদ্ধার করতে পারেননি। ব্যর্থ হয়ে ৩০ ফুটেই খোঁড়া শেষ করে দেন।
তবে এ খবর যত ছড়িয়ে পড়েছে, গুপ্তধন খুঁজতে বহু লোক এসেছেন। বহু তাবড় তাবড় কোম্পানি ঘুরে গিয়েছে এই দ্বীপে। ওই জায়গায় বহু খোঁড়াখুঁড়ি চলেছে। ৩০ ফুট থেকে সেই গর্ত ৯০ ফুট পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছে। কিন্তু কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। একই ভাবে প্রতি ১০ ফুট অন্তর কাঠের স্তর পাওয়া গিয়েছে শুধু।
৯০ ফুট খোঁড়ার পর প্রথম লুকনো সম্পদের আভাস পাওয়া যায়। ঠিক টেবিলের মতো চারকোণা একটা কালো বড় পাথর উদ্ধার হয়। তাতে অদ্ভুত হরফে কিছু লেখাও ছিল।
দীর্ঘ গবেষণা করার পর এক ঐতিহাসিক জানান, তাতে লেখা রয়েছে, ‘৪০ ফুট নীচে ২০ লাখ পাউন্ড পোঁতা রয়েছে।’ অর্থাত্, ৯০ ফুট খোঁড়া হয়েছিল, আরও ৪০ ফুট মিলিয়ে মোট ১৩০ ফুট নীচে ওই গুপ্তধন লুকনো রয়েছে।
ফের শুরু হল খোঁড়া। কিন্তু বেশি দূর আর যেতে হল না। অপ্রত্যাশিত ভাবে গর্তে জল ভরতে শুরু করে। ফলে লোকজনও কাজ ফেলে উপরে উঠে আসেন। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত গর্ত জলে ভরে যায়।
পাম্প চালিয়েও সেই জল বার করে খোঁড়ার কাজ আর শুরু করা যায়নি। সেটা ছিল ১৮০৫ সাল। অনস্লো নামে এক কোম্পানি তখন খোঁজ চালাচ্ছিল গুপ্তধনের। সেই থেকে পরবর্তী ৪০ বছর আর খোঁজা হয়নি গুপ্তধন।
১৮৪৫ সালে অন্য একটি সংস্থা খোঁড়ার কাজ শুরু করে। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ১১৪ ফুট পর্যন্ত খুঁড়তে পেরেছিল তারা। কিন্তু ১৩০ ফুট গভীরে আর পৌঁছনো যায়নি।
আজ পর্যন্ত কেউই ১৩০ ফুট গভীরে পৌঁছতে পারেননি। উল্টে এই গুপ্তধনের ফাঁদে পা দিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ৭ জনের। আজও একই ভাবে গুপ্তধনের ফাঁদ পেতে অতলান্তিকের মাঝে জেগে রয়েছে এই ওক আইল্যান্ড।