Trump’s Tariff Impact

বিপুল ছাড়ে পণ্য বিক্রি! ট্রাম্পের শুল্ক-চাপে ভারতকে বিশেষ প্রস্তাব ‘শ্বাসকষ্টে হাঁসফাঁস’ চিনের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক-বাণে আতঙ্কিত চিনের বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নির্মাণকারী যাবতীয় সংস্থা। পণ্যের বাজার ধরে রাখতে ভারতকে তাই বিপুল ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে তারা। কী করবে নয়াদিল্লি?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৪১
Share:
০১ ১৮
Chinese companies offer huge discount for electronic parts to India amid Donald Trump’s tariff war

আমেরিকার সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে শ্বাস বন্ধ হওয়ার জোগাড়! ‘প্রাণে বাঁচতে’ ভারতের নামে মালা জপছে চিন। শুধু তা-ই নয়, এক রকম জলের দরে বৈদ্যুতিন পণ্য নয়াদিল্লির হাতে তুলে দিতেও আপত্তি নেই বেজিঙের। ড্রাগনের এ-হেন ‘ভালমানুষ’ আচরণ ঘিরে জাগছে সন্দেহ। এর নেপথ্যে অন্য মতলব থাকা একেবারেই আশ্চর্যের নয়। আর তাই নয়াদিল্লিকে অতি সাবধানে পা ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক সেনাকর্তা থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

০২ ১৮
Chinese companies offer huge discount for electronic parts to India amid Donald Trump’s tariff war

চলতি বছরের ৯ এপ্রিল চিনা পণ্যের উপর শুল্কের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে বর্তমানে আমেরিকার বাজারে কোনও সামগ্রী বিক্রি করার ক্ষেত্রে বেজিঙের ঘাড়ে চেপেছে ১৪৫ শতাংশ কর। হোয়াইট হাউসের থেকে সেটা স্পষ্ট হতেই যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলি ড্রাগনভূমি থেকে বৈদ্যুতিন পণ্য আমদানি বন্ধ করার রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছে। আর এতেই পেটে লাথি পড়েছে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের।

Advertisement
০৩ ১৮

বিশ্লেষকদের দাবি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্কের ব্যাপারে ইউ-টার্ন না নিলে বেজিঙের সামনে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে আমেরিকার বাজার। ইতিমধ্যেই চিনা বৈদ্যুতিন পণ্য নির্মাণকারী সংস্থাগুলিকে দেওয়া বরাত ব্যাপক হারে বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক কোম্পানি। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ড্রাগনভূমির একের পর এক কারখানায় যে রাতারাতি লালবাতি জ্বলবে, তা বলাই বাহুল্য।

০৪ ১৮

অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পেরে তাই তড়িঘড়ি বিকল্প বাজারের খোঁজে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে শি-র প্রশাসন। কোনও অবস্থাতেই কারখানাগুলিতে পণ্য উৎপাদন বন্ধ করতে চায় না বেজিং। আর তাই ভারতকে কাছে পেতে চাইছে তারা। এর নেপথ্যে অবশ্য সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণ রয়েছে।

০৫ ১৮

প্রথমত, ভারতে উৎপাদিত বৈদ্যুতিন সামগ্রীর (টিভি, ফ্রিজ়, মাইক্রোওয়েভ বা মোবাইল ফোন) ৭৫ শতাংশ সরঞ্জাম আসে চিন থেকে। দ্বিতীয়ত, এ দেশে এই ধরনের পণ্যের চাহিদা বিদ্যুৎগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে কেন্দ্র। ফলে বৈদ্যুতিন গ্যাজেটগুলি ধীরে ধীরে ভারতীয়দের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

০৬ ১৮

এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে ট্রাম্পের শুল্কবাণ থেকে বাঁচতে দেশীয় সংস্থাগুলিকে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম বিক্রিতে পাঁচ শতাংশ ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে যাবতীয় চিনা কোম্পানি। শর্ত একটাই, বিপুল পরিমাণে বরাত দিতে হবে তাদের। ছাড় দিয়েও বেজিঙের প্রতিষ্ঠানগুলির চার থেকে সাত শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা হবে বলে একাধিক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

০৭ ১৮

দেশীয় বৈদ্যুতিন শিল্প সংস্থাগুলি সাধারণত দুই থেকে তিন মাসের কাঁচামাল মজুত করে থাকে। এ বছরের মে-জুন মাস থেকে ফের এর জন্য বরাত দেওয়া শুরু করবে তারা। তার আগেই ভারতীয় বাজার ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ড্রাগনভূমির নামীদামি সমস্ত সংস্থা।

০৮ ১৮

গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত আর্থিক বছরে (পড়ুন ২০২৪-’২৫) ভারতে বৈদ্যুতিন পণ্যের কাঁচামাল এবং সরঞ্জাম আমদানির পরিমাণ আগের অর্থবর্ষের নিরিখে ৩৬.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ফলে সেটা ৩,৪৪০ কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছেছিল। গত পাঁচ বছরে এই ধরনের সরঞ্জাম এবং কাঁচামালের আমদানি ১১৮ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে নয়াদিল্লি। ২০১৯ আর্থিক বছরে এর জন্য দেশীয় শিল্প সংস্থাগুলির খরচ হয়েছিল ১,৫৮০ কোটি ডলার।

০৯ ১৮

গত বছর চিনের বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার বাজারে ১২ হাজার ৭০৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বেজিং। বিশ্লেষকদের দাবি, এ বছর ট্রাম্প প্রশাসন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেওয়ায় ড্রাগনভূমির সংস্থাগুলি আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছে।

১০ ১৮

বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করেন, চিন থেকে বিপুল ছাড়ে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম এবং কাঁচামাল আমদানি করলে ভারতীয় সংস্থাগুলির লাভের অঙ্ক দুই থেকে তিন শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঘুরপথে আমেরিকার বাজার ধরার সুযোগ পেয়ে যাবে বেজিং। ফলে এ ব্যাপারে দিল্লির সবুজ সঙ্কেত পাওয়া বেশ কঠিন বলেই মনে করেন তাঁরা।

১১ ১৮

ভারতে চিনের বেশ কিছু সংস্থার নিজস্ব কারখানা রয়েছে। সেখানে রাতদিন চলে অ্যাসেম্বিং এবং প্যাকেজিংয়ের কাজ। এই কারখানাগুলিতে বৈদ্যুতিন পণ্যের যাবতীয় সরঞ্জাম আসে বেজিং থেকে। তার পর সেগুলিকে অ্যাসেম্বিং করে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ তৈরি করে তারা। শেষে সস্তা দরে বাজারে বিক্রি হয় ওই সমস্ত পণ্য। এই সমস্ত সামগ্রীর বেশ কয়েকটির গায়ে সাঁটা থাকে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’র লেভেল।

১২ ১৮

চিন বাদে বাকি সমস্ত দেশের ক্ষেত্রে নতুন শুল্ক নীতিতে ৯০ দিনের জন্য ছাড় দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলে আপাতত ভারতীয় পণ্যের উপর মাত্র ১০ শতাংশ কর নেবে আমেরিকা। ফলে এ দেশে তৈরি বৈদ্যুতিন পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিয়ে যেতে পারলে লাভের অঙ্ক ঠিক রাখার সুযোগ পেয়ে যাবে বেজিং। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। তারও সুবিধা নিতে চাইছে চিন।

১৩ ১৮

এই পরিকল্পনায় সাফল্য পেতে দ্বিমুখী নীতি নিয়েছে ড্রাগন। এক দিকে সেখানকার সংস্থাগুলি যেমন ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে ছাড়ের লোভ দেখাচ্ছে, অন্য দিকে দিল্লির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে কূটনৈতিক ভাবে কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে চিন। ভারতের সুনাম করে মার্কিন শুল্কনীতির কড়া সমালোচনা করতে শোনা গিয়েছে বেজিঙের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রকে।

১৪ ১৮

আমেরিকাকে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে জিনপিং সরকার। বাণিজ্যিক সমস্যা মেটাতে চাইলে আলোচনার রাস্তা সব সময়েই খোলা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে ব্ল্যাকমেল করে কিছু হবে না। এর পরই ভারতকে নিয়ে বড় মন্তব্য করে তারা। নয়াদিল্লি সঙ্গে এলে গোটা দুনিয়া ‘হাতি এবং ড্রাগনের নাচ’ দেখতে পাবে বলে মন্তব্য করেছে বেজিং।

১৫ ১৮

ভারতের সঙ্গে চিনের সীমান্ত বিবাদ দীর্ঘ দিনের। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে লাদাখের একটি বড় অংশ দখল করে সেখানকার পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ। এ ছাড়া মাঝেমধ্যেই অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে থাকে বেজিং। দুই দেশের সীমান্তের পোশাকি নাম লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি। সেখানে প্রায়ই আগ্রাসী মনোভাব দেখাতে দেখা গিয়েছে লালফৌজকে।

১৬ ১৮

২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় পিএলএর হামলায় প্রাণ হারান ভারতীয় সেনার এক কর্নেল-সহ ২০ জন সৈনিক। পাল্টা প্রত্যাঘাতে চিনা লালফৌজের ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি। ওই ঘটনার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের ফাটল চওড়া হয়। ড্রাগনভূমিতে সরাসরি বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দেয় নয়াদিল্লি। বাণিজ্যিক সম্পর্কও ধীরে ধীরে কমানোর চেষ্টা করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

১৭ ১৮

বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লির মন জয়ে সীমান্ত সমস্যা পুরোপুরি মিটিয়ে ফেলার বার্তা দিয়েছে চিন। এ ব্যাপারে সৈনিক পর্যায়ে আলোচনায় সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসবে বলে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতেও শোনা গিয়েছে বেজিংকে। কিন্তু বরাবরাই মুখে এক এবং কাজে আর এক করেছে ড্রাগন। পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তাদের। ফলে প্রেসিডেন্ট শি-কে বিশ্বাস করা নয়াদিল্লির পক্ষে কঠিন।

১৮ ১৮

তাই চিনা কোম্পানির লোভনীয় ছা়ড়ের অফার বা ‘হাতি-ড্রাগনের নাচ’-এর মতো মিষ্টি কথায় না ভুলে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে মোদী সরকার। কোনও ব্যাপারেই এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি নয়াদিল্লি। উল্টে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নির্মাণের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্র। চলছে বিকল্প বাজারের খোঁজ। বিশ্লেষকদের দাবি, ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিন পণ্য, সরঞ্জাম এবং কাঁচামালের জন্য জাপান, তাইওয়ান বা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি বৃদ্ধির রাস্তায় হাঁটতে পারে ভারত।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement