ছবি সংগৃহীত।
হাসানের প্রতি দায়িত্ব ও অপরাধবোধের জায়গা থেকে আমির ফিরেছিল সোহরাবকে উদ্ধার করতে। আরও ফিরেছিল কারণ আমেরিকার নিরাপদ জীবনে থেকেও সে বুকের মধ্যে আফগানিস্তানের মানচিত্র বয়ে বেড়াত। ঠিক তার স্রষ্টা খালেদ হোসেনির মতো। যাঁর কলম সারা বিশ্বের পাঠকের কাছে যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত, আতঙ্কিত আফগানিস্তানের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্য আফগানিস্তানের গল্প বলে। তাঁর উপন্যাসগুলিতে উঠে আসে সে দেশের মানুষের সহজ হাসি-গান, সরল জীবন আর নির্মম ভবিতব্যের সঙ্গে লড়াইয়ের ছবি। ১৯৭৬ সালে নিজের পরিবারের সঙ্গে আফগানিস্তান ছেড়ে আমেরিকায় বসবাস শুরু করলেও, বুকের মধ্যে এক টুকরো আফগানিস্তানের মানচিত্র তিনি বয়ে বেড়ান আজও। ঠিক সেই কারণেই, দীর্ঘ ২০ বছর পর আবার তালিবান সে দেশের দখল নিলে সমাজমাধ্যমে নিজের অসহায়তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই বিখ্যাত লেখক। একটি আমেরিকান খবরের চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের ভবিতব্য ঠিক কী, সেই বিষয়ে তিনি কিছুই আন্দাজ করতে পারছেন না। শুধু এটুকুই অনুভব করছেন, দেশটি ধীরে-ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
খালেদের শৈশবে কেমন ছিল কাবুল শহর? প্রশ্নের উত্তরে লেখক জানিয়েছেন, তখনকার কাবুলে মেয়েদের মর্যাদা ও আত্মসম্মান কেউ খর্ব করেনি, তাঁদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ছিল অটুট। এমনকি, দেশ ছাড়ার ২৭ বছর পরে আমেরিকার হাতে তালিবানের পতন হলে ২০০৩ সালে তিনি যখন আবার সে শহরে গিয়েছিলেন, তখনও দেখেছিলেন, ধীরে-ধীরে ছন্দে ফিরছে কাবুল। কিন্তু এখন?
“যে দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম কাবুলও দখল করে নিয়েছে তালিবান, বুকে সজোরে আঘাত লাগল যেন! কাবুলের সঙ্গে আমার আজন্মলালিত সম্পর্ক, সে শহরে আবার তালিবানের পতাকা... মেনে নেওয়া যায় না!” তারপরেই সমাজ মাধ্যমে সে দেশে বসবাসকারী তাঁর বন্ধু ও পরিজন, মানবাধিকার কর্মী, নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিটি মানুষের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। বিশেষ করে, উদ্বিগ্ন হয়েছেন সে দেশের মেয়েদের জন্য। “নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তানের সমাজ থেকে মেয়েদের জোর করে প্রায় মুছে দিয়েছিল তালিবান। মানুষ হিসেবে তাঁদের কোনও মূল্য ছিল না। এখন শুধু প্রার্থনা সেই অবস্থা যেন আর ফিরে না আসে।” যদিও তালিবানের দাবি, মেয়েদের অধিকার খর্ব হবে না।
কিন্তু অন্য অনেকের মতোই সেই মুখের কথায় বিশেষ প্রত্যয় নেই হোসেনির। বিশেষ করে, শরিয়ত মেনে মেয়েদের ঠিক কতটা ‘স্বাধীনতা’ দেওয়া হবে সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছেন আমেরিকার ভূমিকা নিয়েও।
“প্রাথমিক ভাবে অন্য অনেক আফগানের মতোই আমেরিকার ভূমিকা আমি সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, গত ২০ বছরের লড়াই তাহলে এ ভাবে নিষ্ফল হয়ে গেল? আমেরিকার তরফে হার স্বীকার করে নিতে হল সেই গোষ্ঠীর কাছে, যাদের সরাতেই আফগানিস্তানে পা রেখেছিল সেই দেশ। আজ আমার দেশের মানুষ এমন এক গোষ্ঠীর হাতের পুতুল, যাদের আমেরিকা জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।” শুধু তাই নয়, অন্যান্য দেশের উচিত আফগান শরণার্থীদের ঠাঁই দেওয়া, সেই কথাও বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমি আফগানিস্তানের প্রতিনিধি নই, আমি শুধু আমার উপন্যাসে বিশ্বের সামনে আমার দেশের মানুষের কথা তুলে ধরি। বিশ্বাস করুন, ৪০ বছরের ক্রমাগত যুদ্ধে সে দেশের মানুষ ক্লান্ত। তাঁদের আশ্রয় প্রয়োজন, প্রয়োজন শান্তি ও মর্যাদারও।”