সান ফ্রান্সিসকোয় একটি অনুষ্ঠানে কমলা হ্যারিস। রয়টার্স
বারাক ওবামার পরে এ বার কমলা হ্যারিসকেও শুনতে হল— ‘আপনি কালো, কিন্তু ততটাও কালো নন। আপনি মার্কিন নন, তাই ভোটে লড়ারও অধিকার নেই।’
ভোটের ময়দানে ফের বর্ণবিদ্বেষের ঝড় মার্কিন মুলুকে। হোয়াইট হাউসের দৌড়ে নেমে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তরফেও এমন বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল ওবামাকে। সেই এক প্রসঙ্গে এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় লাঞ্ছিত হতে হল ভারতীয় বংশোদ্ভূত রিপাবলিকান সেনেটর হ্যারিসকেও। তাঁকে নিশানায় রেখে বর্ণবিদ্বেষমূলক একটি টুইটে সায় দিতে দেখা গেল খোদ প্রেসিডেন্ট-পুত্র জুনিয়ার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। পাল্টা আসরে নামলেন ক্ষুব্ধ ডেমোক্র্যাটরাও।
গত বৃহস্পতিবার ডেমোক্র্যাটদের বিতর্কসভায় দেশের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বর্ণবিদ্বেষ প্রসঙ্গে একহাত নিয়েছিলেন হ্যারিস। আর রাতারাতি সেটাই ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়ায় ক্যালিফর্নিয়ার সেনেটরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠে, ভোটের বাজারে ফায়দা তুলতে নিজেকে আফ্রো-আমেরিকান প্রমাণের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন হ্যারিস। যা তিনি নন।
ডেমোক্র্যাট সূত্রে খবর, আলি অ্যালেকজ়ান্ডার নামে এক চরম ডানপন্থী নেটিজ়েন প্রথম খোঁচাটা দেন টুইটারে। হ্যারিসের মা ভারতীয়, আর বাবা জামাইকান। তাই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর দৌড়ে শামিল এই ডেমোক্র্যাট নেত্রী ‘মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ’ নয় বলে তাঁকে ‘অযোগ্য’ তকমা দিয়ে সুর চড়তে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সরাসরি মুখ না-খুললেও, এ নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েননি জুনিয়র ট্রাম্প। আলির টুইট রিটুইট করে প্রেসিডেন্ট-পুত্র লেখেন— ‘আচ্ছা, তাই নাকি।’ যেন তিনি জানতেনই না হ্যারিসের বংশপরিচয়! পরে চাপের মুখে অবশ্য সেই টুইট মুছে ফেলেন তিনি।
উত্তেজনার পারদ তবু চড়ছেই। বিষয়টি নিয়ে প্রথম হ্যারিসের পাশে দাঁড়ান ম্যাসাচুসেটসের সেনেটর এলিজ়াবেথ ওয়ারেন। তাঁর কথায়, ‘‘হ্যারিসের বিরুদ্ধে এই আক্রমণ জঘন্য ও বর্ণবিদ্বেষমূলক।’’ তিনি এর প্রতিবাদের ডাক দিতেই পর-পর মুখ খুলতে শুরু করেন সেনেটর করি বুকার, অ্যামি ক্লবুচারের মতো এক ঝাঁক ডেমোক্র্যাট নেতা-নেত্রী। বাইডেনও বলেন, ‘‘আমেরিকায় বর্ণবিদ্বেষের কোনও জায়গা নেই।’’
বাইডেন বললেও, আমেরিকায় বর্ণবিদ্বেষের বাড়াবাড়ি দীর্ঘদিনের। ভোটের ময়দানেই হ্যারিসকে এই নোংরা আক্রমণের জবাব দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন নেত্রীর প্রচার ম্যানেজার লিলি অ্যাডামস। তাঁর কথায়, ‘‘এমন আক্রমণ তো বারাক ওবামাকে রুখতেও হয়েছিল। এ বারও এমন কৌশল বিফলে যাবে।’’ অনেকে বলছেন, বর্ণবিদ্বেষের এই ট্রোলিংয়ে আদতে লাভই হল হ্যারিসের। দলের সাম্প্রতিক বিতর্কসভার পরে এখনও পর্যন্ত তাঁর প্রচার তহবিলে জমা পড়েছে প্রায় ২০ লক্ষ ডলার। যে ৬৩ হাজার অনুগামী তাঁকে অর্থসাহায্য করেছেন, তার ৬০ শতাংশই প্রথম কোনও প্রার্থীকে রাজনৈতিক অনুদান দিলেন বলে জানা গিয়েছে। টুইটারে #ফরদ্যপিপল প্রচারে এ জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন হ্যারিস।