ফাইল চিত্র।
ছেলেকে কিছুতেই কাছ-ছাড়া করতে চাইছিলেন না বাবা। বছর ছয়েকের ছেলেটাও অসহায় ভাবে শুধু কেঁদেই চলেছিল। তবু আমেরিকার অভিবাসন দফতররের কর্তারা রেয়াত করেননি। ২০১৮-র মে— জোর করেই আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল হন্ডুরাসের পিতা-পুত্রকে। সৌজন্যে, অবৈধ অভিবাসী রুখতে প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই কুখ্যাত ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি।
একটু ভাল খাওয়া-পরার তাগিদে ওই সময়েই গুয়াতেমালা থেকে সাত বছরের মেয়ে ডায়ানাকে নিয়ে ট্রাম্পের দেশে এসে পড়েছিলেন আর এক হতভাগ্য বাবা। তাঁরও বৈধ কাগজ ছিল না। একটা শিবিরে কোনও মতে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছিল। কিন্তু এক দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ছোট্ট ডায়ানা দেখল, বাবা নেই! ধরে নিয়ে গেছে ট্রাম্পের অফিসারেরা। হন্ডুরাসের বাবা-ছেলের পুনর্মিলন হয়েছিল ১০ মাস পরে। আমেরিকার ‘আশ্রয়’ থেকে ডায়ানা যখন তার বাবার কাছে ফিরল, তখন দেড় বছর বয়স বেড়ে গিয়েছে তার! একটি রিপোর্ট বলছে ট্রাম্প-জমানায় এমন ভোগান্তি সইতে হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি শিশুকে। পাঁচশোরও বেশি শিশু এখনও অভিভাবকহীন। মানবিকতার স্বার্থেই ট্রাম্পের ওই ‘জ়িরো টলারেন্স’ অভিবাসন নীতি বাতিল করে তা ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দিলেন নয়া আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
গত কাল বাইডেন যে প্রশাসনিক নির্দেশিকায় সই করেছেন, তাতে স্পষ্ট বলা আছে, তাঁর পূর্বসূরির নীতির জেরে ভুক্তভোগীদের দ্রুত পুনর্মিলনের জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গড়া হবে।
২০১৭-য় ক্ষমতায় আসার পর-পরই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, যে ভাবেই হোক দক্ষিণ সীমান্ত থেকে অবৈধ অভিবাসীর স্রোত রুখতেই হবে। এক বছর পরে রাতারাতি ট্রাম্প ঘোষণা করে বসলেন তাঁর ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতির কথা। অর্থাৎ, অবৈধ শরণার্থীদের আর কোনও ভাবেই সহ্য করবে না তাঁর দেশ। শুরু হয়ে যায়, বাবা-মায়ের থেকে সন্তানদের জোর করে আলাদা করার প্রক্রিয়া। অমানবিক এই প্রক্রিয়া নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে চালুর এক বছরের মাথায় ট্রাম্প বাধ্য হন তা স্থগিত রাখতে। কিন্তু তত দিনে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে অন্তত ৫ হাজার শিশুর। অভিযোগ, ৬১১টি শিশু এখনও তাদের বাবা-মায়ের খোঁজ পায়নি।