জো বাইডেন। —ফাইল চিত্র।
অভিযোগ, মাদক চোরাচালান প্রতিরোধের নামে ভুয়ো সংঘর্ষে বিচার বহির্ভূত ভাবে মানুষ হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই কারণে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন)-এর প্রাক্তন ও বর্তমান ৭ জন কর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করল আমেরিকার জো বাইডেন সরকারের রাজস্ব দফতর। এই ৭ জনের মধ্যে রয়েছেন বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের আইজি বেনজির আহমেদ, কিছু দিন আগে পর্যন্ত যিনি ছিলেন র্যাবের ডিজি। তাঁকে এবং র্যাব-এর আর এক শীর্ষ কর্তা মিফতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে আমেরিকার বিদেশ দফতরও আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জানিয়েছে, এই দু’জনকে আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। কক্সবাজার পুরসভার এক কাউন্সিলর একরামুল হককে ‘ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যার জন্য’ এই ব্যবস্থা বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার আমেরিকার এই পদক্ষেপকে ‘অহেতুক বাড়াবাড়ি’ বলে মন্তব্য করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ঢাকায় আমেরিকার রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে অসন্তোষের কথা জানিয়ে দেন বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেন। এর পরে আমেরিকার মানবাধিকার নিয়ে পাল্টা মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে চিন, মায়ানমার, উত্তর কোরিয়ার একাধিক সংস্থা ও ব্যক্তির উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। মায়ানমারের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন পাশে পেয়েছে ব্রিটেন ও কানাডাকেও। কৃত্রিম মেধা বিষয়ক চিনা সংস্থা সেন্স টাইম গ্রুপের লগ্নিতেও আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা চেপেছে। একই সঙ্গে ভুয়ো সংঘর্ষে ১০ বছরে ৬০০-র বেশি মানুষকে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশে র্যাব-এর ৭ জন শীর্ষ কর্তার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা চাপায় আমেরিকা। এর ফলে এঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে সে দেশের সরকার। আমেরিকায় এঁদের ব্যবসা বা অন্য কাজকর্মও করতে দেওয়া হবে না।
আমেরিকা সরকারের এই সিদ্ধান্তে খোলামেলা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ঢাকা। বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, আমেরিকার এই পদক্ষেপ দুঃখজনক। তিনি বলেন, “কোনও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার প্রধানকে যুক্ত করাটা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঢং। যে কোনও অভিযোগ তথ্যভিত্তিক হওয়া উচিত। ১০ বছরে ৬০০ লোক মারা গিয়েছেন, তা ঢালাও ভাবে বলাটা ঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ, যেখানে পরিপক্ক গণতন্ত্র রয়েছে, তাদের কাছ থেকে এমন ঢালাও অভিযোগ কাম্য নয়। কারণ, তাদের দেশে প্রতি বছর ছয় লাখ লোক নিখোঁজ হন।” তথ্যমন্ত্রী তথা বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ এ দিন বলেন, আমেরিকাতেই মানবাধিকারের চরম উল্লঙ্ঘন হয়। তারা আবার অন্য দেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপাচ্ছে।
বিরোধী বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বলেন, র্যাবের এই ভূমিকার জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের দলের বহু নেতাকর্মীকে গুম খুন করা হয়েছে। এমনকি সাংসদও বাদ পড়েননি। সুতরাং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগটি নতুন কিছু নয়।