জ্যানেল মোনে
একটা শব্দ। তবে নিছক শব্দ নয়। বলা যেতে পারে, আত্মপরিচয় নির্মাণের এক নতুন হাতিয়ার। সেই শব্দটাকেই ব্যবহার করে আলোড়ন ফেলে দিলেন মার্কিন পপ তারকা জ্যানেল মোনে।
প্যানসেক্সুয়াল। বা পরিকামিতা। যা কিনা, সমকামিতা, বিসমকামিতা, এমনকি উভকামিতার থেকেও আলাদা! তাঁর নতুন অ্যালবাম ‘ডার্টি কম্পিউটার’–এর প্রচারে একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ‘প্যানসেক্সুয়াল’ আত্মপরিচয়টাই বেছে নিয়েছেন জ্যানেল।
ইউরোপ-আমেরিকার ‘ওয়াই টু কে’ প্রজন্ম, অর্থাৎ সন ২০০০ বা তার পরে যাদের জন্ম, তারা উভকামিতা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। আর এই প্রজন্ম যে-সব গায়ক/গায়িকা বা নায়ক/নায়িকার ভক্ত, তাঁদেরও অনেকে স্বঘোষিত উভকামী। তালিকাটি দীর্ঘ— টোয়ালাইট সিরিজের নায়িকা ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট, অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ড, মার্কিন গায়িকা ও গীতিকার মাইলি সাইরাস, ফরাসি গায়িকা সোকো, মার্কিন পপ তারকা বিলি জো আর্মস্ট্রংয়ের মতো অসংখ্য নারী-পুরুষ। এঁদের মধ্যে মাইলি সাইরাস প্রথম সচেতন ভাবে বলেছিলেন, ‘‘উভকামী নই, আমি পরিকামী।’’
সেটা ২০১৫-র অগস্ট মাসের কথা। একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাইলি বলেন, ‘‘আমি পুরুষসঙ্গ ভালবাসি, না নারীসঙ্গ, নাকি দু’টোই, এ নিয়ে বহু জল্পনা হয়। আমি বরং বলছি, আমি পরিকামী।’’ একই ঢঙে তাঁর সাম্প্রতিকতম সাক্ষাৎকারে জ্যানেলও বললেন, ‘‘আমি কে, তা জানতে আমি নিজেও উৎসুক। ‘পরিকামিতা’ আমায় সেই জানায় সাহায্য করবে।’’
এলজিবিটি অধিকার নিয়ে কাজ করছেন যাঁরা, তাঁদের মতে সমকামিতা এবং বিসমকামিতার দ্বিমুখী বৈপরীত্য ভাঙতে সাহায্য করবে ‘পরিকামিতা’। কারণ, নতুন প্রজন্ম এই দ্বিমুখী বৈপরীত্যের বদলে ছকভাঙা যৌনআত্মপরিচয় আঁকড়ে ধরতেই পছন্দ করে। জ্যানেল যেমন বলেছেন, ‘‘নারী, পুরুষ, সমকামী নারী, সমকামী পুরুষ, বিসমকামী নারী, বিসমকামী পুরুষ, উভকামী নারী, উভকামী পুরুষ, রূপান্তরকামী— আমার পছন্দের তালিকায় তো যে কেউই থাকতে পারেন।’’
লন্ডনের লাফবরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোহীত দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘সাধারণত, দ্বিমুখী বৈপরীত্যের নিরিখেই সামাজিক ও প্রাকৃতিক লিঙ্গ বিভাজন করা হয়। নারী বনাম পুরুষ। বা আরও এক ধাপ এগিয়ে, সমকামী বনাম বিসমকামী। সেই বৈপরীত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে পরিকামিতা। সে দিক থেকে দেখলে এটি একটি যথেষ্ট প্রগতিশীল পদক্ষেপ।’’ এলজিবিটি কর্মী সোনালি রায়ও বললেন, ‘‘এই সব কথা নিয়ে যে খোলাখুলি আলোচনা হচ্ছে, সেটা ভালই।’’ কিন্তু নিন্দুকেরা যে বলছেন, এটা পশ্চিমি চটকমাত্র? মনোযোগ আকর্ষণের এক কৌশল? ইতিহাসের শিক্ষক সোমা মারিক অবশ্য সেই সমালোচনা মানতে নারাজ। বললেন, ‘‘কৌশল হবে কেন? এটা তো ছকভাঙা যৌনতার পরিকাঠামোর মধ্যে নিতান্ত ব্যক্তিগত পছন্দের বহিঃপ্রকাশ।’’
এই ছকভাঙা কথাটা জরুরি। কারণ, যৌনতার নিরিখে মানুষকে প্রান্তবাসী করে রাখার ঘটনা তো নতুন নয়। বিসমকামিতা নামক সেই ঔদ্ধত্যের গালে এক সপাট থাপ্পড় পরিকামিতা। ছকভাঙা যৌনতার আত্মাভিমান।