—ফাইল চিত্র
নার্সারি স্কুলের গায়েই আর একটি এলিমেন্টরি স্কুল। মিলানের কাছে শহরতলি বোলাতে-র এই দুই স্কুল এখন দেশের সংবাদ-শিরোনামে। মাত্র কয়েক দিনে করোনা-আক্রান্ত ৪৫টি শিশু, ১৪ জন কর্মী। জেনেটিক বিশ্লেষণ-সহ তদন্ত রিপোর্টের দাবি, সংক্রামক— ব্রিটেনের নতুন স্ট্রেন।
‘ব্রিটেন স্ট্রেন’ নিয়ে গত কয়েক মাসের আতঙ্কের মাঝেই নতুন একটি অতিসংক্রামক স্ট্রেন ধরা পড়েছে ব্রিটেনে। ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেনের সঙ্গে মিল রয়েছে এর। তবে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই স্ট্রেনটির উৎপত্তি ব্রিটেনেই। ইটালির ছোট্ট একটি শহরে কী ভাবে তা ছড়িয়ে পড়ল, তা অবশ্য অজানা। ঘনবসতিপূর্ণ শহর বোলেতে। একটি রাসায়নিক কারখানা আছে। একটি বাইসাইকেলের টায়ার কারখানাও আছে। এগুলি থেকে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে পারে, আশঙ্কায় প্রশাসন।
লমবার্ডির প্রথম শহর বোলাতে। এই লমবার্ডিই সংক্রমণের সব চেয়ে ভয়াবহতা দেখেছে। ইটালিতে যে তিনটি সংক্রমণ-ঢেউ আছড়ে পড়েছিল, তিনটিরই এপিসেন্টার ছিল লমবার্ডি। নতুন স্ট্রেনের আতঙ্কে তড়িঘড়ি আশপাশের প্রদেশগুলিতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র আশঙ্কা, নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে পারে ইউরোপে। গত এক সপ্তাহে ১০ লক্ষ নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে ইউরোপে। আগের সপ্তাহের থেকে ৯ শতাংশ বেশি।
হু-র ইউরোপ বিষয়ক আঞ্চলিক প্রধান হান্স ক্লুগ বলেন, ‘‘নতুন স্ট্রেনের জন্য সংক্রমণ বাড়ছে, তবে সেটিই একমাত্র কারণ নয়। দূরত্ববিধি-সহ অন্যান্য কড়াকড়ি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে হাল্কা করা হচ্ছে। সেটাও কারণ।’’ হু জানাচ্ছে, ব্রিটেন স্ট্রেন বলে যেটি পরিচিত, সেটি ইউরোপের ২৭টি দেশে দ্রুত ছড়িয়েছে। এর মধ্যে সব চেয়ে এগিয়ে: ব্রিটেন, ডেনমার্ক, ইটালি, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইজ়রায়েল, স্পেন ও পর্তুগাল। হু-র বিশেষজ্ঞদের দাবি, গত বসন্তে যে স্ট্রেনগুলি ছিল, তার থেকে অন্তত ৫০% বেশি সংক্রামক এই নতুন স্ট্রেন। হান্স ক্লুগের কথায়, ‘‘এ বারে আরও বেশি অসহায় স্বাস্থ্য দফতর।’’ গত বছরের ক্ষত এখনও ভুলতে পারেনি লমবার্ডি। এ বারে ফের একটু একটু করে হাসপাতাল ভরতে শুরু করেছে। আইসিইউয়ে বেড ফাঁকা নেই। ভর্তি থাকা রোগীদের দুই-তৃতীয়াংশই নয়া স্ট্রেনে আক্রান্ত।
নতুন স্ট্রেনের ভয়ে ফের আংশিক লকডাউন জারি করতে চলেছে পোল্যান্ড। চেক প্রজাতন্ত্রের পরিস্থিতিও ভাল নয়। ফ্রান্সের নিস শহর, ডানকার্ক বন্দর সংলগ্ন এলাকায় লকডাউন শুরু হতে পারে। অস্ট্রিয়া সড়কপথে নজরদারি বাড়াচ্ছে।
এই অতিমারি পরিস্থিতিতে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ একাধিক দেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র কাছে আবেদন জানিয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত যে কোনও আবিষ্কারের উপর থেকে ‘ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট’ তুলে দেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংস্থা ছাড়াও অন্যান্যরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষেধক তৈরি করতে পারবে। তাতে প্রতিষেধকের উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু এই প্রস্তাবে অনিচ্ছুক বহু উন্নত দেশই। গত কাল চার রিপাবলিকান সেনেটর ভারতের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিয়েছেন— যেন তিনি কোনও ভাবেই সম্মতি প্রকাশ না-করেন।