এই ছবিই ছড়িয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছবি: রয়টার্স
বছর দুয়েক আগে সিরিয়া থেকে অপহৃত এক মার্কিন সাংবাদিকের মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিও পোস্ট করে ফের আমেরিকাকে কড়া বার্তা দিল আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া)। একই ভিডিওতে জঙ্গিদের দাবি, তাঁদের হাতে বন্দি আরও এক মার্কিন সাংবাদিক। সঙ্গে হুমকি, জঙ্গি দমনের নামে ইরাকে বিমান হামলা চালানো বন্ধ না হলে তাঁকেও মেরে ফেলা হবে।
গত কালই চার মিনিট চার সেকেন্ডের এই ভিডিও জঙ্গিদের হাত ঘুরে ছড়িয়ে পড়ে ইউটিউবে। ২০০২ সালে ঠিক একই রকম ভাবে পাকিস্তানে অপহৃত মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের মুণ্ডচ্ছেদ করে তার ভিডিও পোস্ট করে আল কায়দা। স্বাভাবিক ভাবেই আইএসআইএসের এই সাম্প্রতিক ভিডিওতে উত্তেজনা ছড়ায় বিশ্বজুড়ে। একটা সময়ের পরে অবশ্য তা সরিয়েও নেওয়া হয়। ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছিল মরুভূমির মধ্যে হাঁটু মুড়ে বসে কমলা জোব্বায় ঢাকা এক জন। অবিকল কিউবার গুয়ান্তানামো বে-তে রাখা বন্দিদের উর্দি। ইনিও বন্দি। তবে মার্কিনি সেনার হাতে নয়, আইএসআইএসের হাতে। পাশেই মুখোশ আর কালো পোশাকে চকচকে ছুরি হাতে এক জঙ্গি। জানা গিয়েছে, ওবামাকে ‘বার্তা’ দিতে মরুভূমিতে হাত পিছমোড়া করে বেঁধে যাঁর মাথা কেটে ফেলা হয়েছে, তাঁর নাম জেমস ফোলি। পেশায় চিত্র সাংবাদিক। সিরিয়ার যুদ্ধবিদ্ধস্ত পরিস্থিতি কভার করতে গিয়ে ২০১২-র নভেম্বরে তিনি অপহৃত হন। আর অন্য যে সাংবাদিককে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে ভিডিওটিতে, সেই স্টিভেন সটলফকেও ২০১৩ সালে অপহরণ করে আইএসআইএস।
কিন্তু অপহরণের দু’বছর পর ফলিকে কেন এ ভাবে মেরে ফেরা হল? উত্তর ইরাকের মসুল বাঁধ জঙ্গিদের দখলমুক্ত করতে দিন তিনেক আগে সেখানে বিমান হামলা চালায় মার্কিন সেনা। মনে করা হচ্ছে, তার পর থেকেই বেশি করে ফুঁসছে আইএসআইএস। ইরাকের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ওই বাঁধের একটি বিশেষ কৌশলী অবস্থান আছে। সাদ্দাম হুসেনের আমলে তৈরি বাঁধটি এক দিক থেকে ইরাকের রাজনীতিতে ক্ষমতার প্রতীক। এ মাসের গোড়াতেই ওই বাঁধ নিজেদের কব্জায় নিয়েছিল আইএসআইএস। তবে সম্প্রতি ওবামা সাংবাদিক বৈঠক করে মসুল বাঁধ পুনর্দখল এবং প্রয়োজনে ইরাকে ফের নিয়ন্ত্রিত বিমান হামলা চালানোর কথা বলাতেই পাল্টা হুমকি দিতে শুরু করেছে আইএস গোষ্ঠী। মূলত ভিডিও পোস্টেই আমেরিকাকে একের পর এক বার্তা পাঠাচ্ছে তারা। মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিও পোস্ট করার আগেই টুইটারে অন্য একটি ভিডিও লিঙ্কে জঙ্গিরা হুমকি দিয়েছিল, ‘‘ইরাকে বিমান হামলা চালালে তোমাদের প্রত্যেককে রক্তে ডুবতে হবে!’’
অথচ কুর্দ বাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে আজও বিমান হানা অব্যাহত রেখেছে মার্কিন সেনা। অভিযোগ, উত্তর ইরাকের মসুল বাঁধ লাগোয়া একটি স্কুলে আইএসআইএসের গোপন বৈঠক চলাকালীন হামলাটি হয়। আমেরিকা অবশ্য এখনও এই হামলার কথা স্বীকার করেনি। জানা যায়নি হতাহতের সংখ্যাও।
সদ্য সন্তান হারানো মায়ের এ প্রশ্নের উত্তর নেই হোয়াইট হাউস কর্তাদের কাছেও। মাঝখানে ইরাকের পরিস্থিতির কারণেই ব্যক্তিগত ছুটি বাতিল করে নিজের অফিসে ফিরে এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। তাঁরই নির্দেশে তদন্তের পর হোয়াইট হাউসের প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন ভিডিও পোস্টটি যথাযথ। নিহত সাংবাদিক জেমস ফোলি তাঁদের দেশেরই নাগরিক।
মুণ্ডচ্ছেদের ভিডিওতে যে জঙ্গিকে কথা বলতে শোনা গিয়েছে, তাঁর উচ্চারণ ব্রিটিশদের মতো হওয়াতেই অস্বস্তিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও। প্রথম থেকেই আমেরিকা অভিযোগ করছিল, হত্যাকারী জঙ্গি জন্মসূত্রে ব্রিটিশ। ব্রিটেনের বিদেশসচিব ফিলিপ হ্যামন্ডও সেই অভিযোগ মেনে নেওয়াতে তড়িঘড়ি ছুটি বাতিল করে লন্ডনে ফিরে এসেছেন ক্যামেরন।