শান্তি রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ তালিবান? ছবি রয়টার্স।
গত বছরের ২৬ অগস্ট। মাত্র এগারো দিন আগে আফগানিস্তানে নতুন করে ক্ষমতা দখল করেছে তালিবান বাহিনী। আমেরিকান সেনা পাকাপাকি ভাবে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার আগে তখন দেশ ছাড়ার হিড়িক সাধারণ মানুষের মধ্যে। আচমকাই আত্মঘাতী বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল কাবুলের হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আমেরিকান সেনা-সহ সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন অন্তত ১৮২ জন। যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন আফগান নাগরিক। তার পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে একের পর এক হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে আফগানিস্তানের মাটি। বিশেষ করে নিশানা করা হচ্ছে শিয়া মসজিদগুলিকে। যাতে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ আফগান নাগরিকেরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির ইসলামিক স্টেটের খোরাসন (আইএস-কে) শাখার দিকে। শাসক তালিবান মুখে বারবার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা বললেও শাসনের দ্বিতীয় দফায় গোটা দেশে কি তারা শান্তি রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ? ধীরে ধীরে কি তাদের কর্তৃত্বের রাশ আলগা হচ্ছে? এই প্রশ্ন আরও জোরালো হতে শুরু করেছে আজ কাবুলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি হামলার পরে।
আজ আফগান রাজধানীতে ‘কাজ় এডুকেশন সেন্টার’ নামে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আত্মঘাতী হামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৯ জন ছাত্রছাত্রীর। তালিবান সরকার নিহতের সংখ্যা ১৯ বলে দাবি করলেও আসল সংখ্যাটা শতাধিক বলে দাবি করেছেন এক সাংবাদিক। সেই সময়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচুর ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছিল। ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই হামলার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সারা বিশ্ব। অনেক দেশই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই হামলার কড়া নিন্দা করেছে। তালিকায় রয়েছে ইরান, নরওয়ে, আমেরিকার মতো দেশ। আফগান সরকারের তরফেও এই হামলার কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। তালিবান সরকারের মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ টুইটারে এই হামলাকে ‘ভয়ানক’ বলে উল্লেখ করেছেন। ‘হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন’-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল্লা আবদুল্লা বলেছেন, ‘‘এই হামলার জন্য যারা দায়ী, তারা আসলে দেশে শান্তি আর উন্নয়নের বিরোধী।’’ আমেরিকান ‘চার্জ দ্য’ফেয়ার্স’ ক্যারেন ডেকার টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমেরিকা আজকের হামলার কড়া নিন্দা করছে। এ ভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি একটি ঘরকে জঙ্গি হামলার নিশানা করা লজ্জাজনক ঘটনা। সব পড়ুয়ারই শান্তিতে পড়াশোনা করার অধিকার রয়েছে।’’
সাউথ এশিয়ান টেররিজ়ম পোর্টাল বা এসএটিপি-র পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র চলতি বছরেই আফগানিস্তান জুড়ে ২০৭টি সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। যাতে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে দেড়শো জনের।