গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
ঘনঘন বিলাসবহুল গাড়ি কেনা, নামী-দামি হোটেল-রেস্তরাঁ-পর্যটনকেন্দ্রে আরামে-আয়েশে দিন কাটানো, কিংবা দেশ-বিদেশের সুন্দরী কলগার্লদের সঙ্গে সময় কাটানোর বিলাসিতা— ‘শখের’ কোনওটাই বাদ ছিল না। আদপে তারা চোর। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ‘জুয়েল থিফ’।
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। অবশেষে ধরা পড়েই গেল জিকা-বোকা জুটি। সার্বিয়ার ‘বান্টি বাবলি’। ১৫ বছর পর। কিনারা করল ইন্টারপোল। দু’ফোঁটা রক্তের সূত্রেই আন্তর্জাতিক দুই জুয়েলারি মাফিয়াকে জালে ধরেছে আন্তর্জাতিক তদন্তকারী সংস্থা।
ইন্টারপোল জানিয়েছে, ২০০৩ সালে ফ্রান্সের একটি গয়না ও মূল্যবান সামগ্রীর দোকানে চুরির সময় দোকানে দু’ফোঁটা রক্ত পড়েছিল। সেই রক্তের নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার পরই চিহ্নিত হয় চোর। তারপরেই ওই চুরির কিনারা করতে ‘পিঙ্ক প্যান্থার’ নামে একটি অপারেশন শুরু করে ইন্টারপোল। সারা বিশ্বের দাগি চোরেদের রক্তের নমুনার সঙ্গে মেলানো শুরু হয়। তাতেই জিকা-বোকা চিহ্নিত হয়।
আরও খবর: বাড়ি মেরামত করতে গিয়ে মিলল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের লাঞ্চবক্স, খুলে অবাক দম্পতি
ধরাও পড়ে নাটকীয়ভাবে। ওই দোকানের চুরি যাওয়া একটি দামি ঘড়ি জিকা-বোকার এক শাগরেদের হাতে ছিল। তাকে জেরা করেই সন্ধান মেলে সার্বিয়ান দুই চোরের। দু’জনকে গ্রেফতারের পরই কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে পড়ে কেউটে।
জানা যায়, ১৯৯৯ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত অন্তত ৩৮০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে এই জুটি। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই মিলিয়ে মোট টাকার পরিমাণ ৩৩ কোটি ৪০ লক্ষ ইউরো, ভারতীয় মূদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যা শুনে কার্যত মাথা ঘুরে গিয়েছে ইন্টারপোলের দুঁদে গোয়েন্দাদেরও।
আরও পড়ুন: ৯৬ বছরের ঠাকুমার সঙ্গে ওবামার নাচ, দেখুন ভিডিয়ো
ইন্টারপোল জানিয়েছে, বিপুল এই টাকার অধিকাংশটাই বিলাস-ব্যসনে ব্যয় করত জিকা-বোকা। একইসঙ্গে উঠতি দুষ্কৃতীদের চুরি-ছিনতাইয়ের পাঠ দেওয়ার কাজেও বিনিয়োগ করত এই দু’জন। সম্প্রতি মাদক ব্যবসাতেও হাত পাকিয়েছিল বলে খবর। তবে একটা ব্যাপারে দু’জনেরই নীতি ছিল স্পষ্ট। এখনও পর্যন্ত নিজের দেশ সার্বিয়ায় একটিও দুষ্কর্ম করেনি এই জুটি। তা সে ধরা পড়ার ভয়ে হোক বা মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা। চোরের ‘ধর্ম’ বলে যতই খোঁটা দেওয়া হোক, এক্ষেত্রে অন্তত জিকা-বোকা ‘দেশপ্রেমের ধর্ম’ পালন করেছেন।