রাশিয়ার বিরুদ্ধে সুর না চড়িয়ে দিল্লি কার্যত মস্কোকে সমর্থনই করছে। ফাইল চিত্র।
ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে ভারসাম্যের কূটনীতির পথেই হাঁটল ভারত। ইউক্রেনের দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে সেই অঞ্চলে রুশ সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তের আজ কড়া সমালোচনা করেছে পশ্চিমী দুনিয়া। কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ দিনও মুখ খোলেনি ভারত। তবে কত দিন দিল্লি এই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে তা নিয়ে সন্দিহান কূটনীতিকেরা।
এ দিন রাতে ২৪২ জন যাত্রীকে নিয়ে ইউক্রেন থেকে ফিরেছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ উড়ান ‘এআই১৯৪৭’। ভারতীয়দের ইউক্রেন থেকে ফেরাতে তিনটি বিশেষ উড়ান চালানোর কথা ঘোষণা করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। এটি সেগুলির মধ্যে প্রথম। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষী লেখির কথায়, ‘‘আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয়রা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।’’ ইউক্রেনে থাকা ভারতীয় মেডিক্যাল পড়ুয়ারা যাতে অনলাইনে পড়াশোনা চালাতে পারেন তা নিশ্চিত করতে ভারতীয় দূতাবাস সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছে।
গত কাল ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মান্যতা দিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার। ওই দুই এলাকায় প্রবেশ করতে রুশ সেনাকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এর পরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। তাতে আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি ও কেনিয়া এই সিদ্ধান্তকে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের উপরে হামলার তকমা দিয়েছে। ওই দেশগুলি জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি ও অন্য পদক্ষেপ করবে তারা।
কিন্তু এই দেশগুলির সঙ্গে যোগ না দিয়ে ফের আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন সঙ্কট মেটানোর উপরে জোর দিয়েছে ভারত। নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এখনই সব দেশের বৈধ স্বার্থের কথা বিবেচনা করে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সুস্থিতির লক্ষ্যে পদক্ষেপ করা উচিত।’’ এই প্রসঙ্গে ২০১৪-১৫ সালের মিনস্ক চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন তিরুমূর্তি। ইউক্রেন সংক্রান্ত সেই চুক্তি এখনও কার্যকর হয়নি। তিরুমূর্তির বক্তব্য, ‘‘রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপের ওএসসিই গোষ্ঠীর দেশগুলিকে নিয়ে গঠিত গোষ্ঠীর আলোচনাকে স্বাগত জানাচ্ছে ভারত। সেই সঙ্গে রাশিয়া, ইউক্রেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে নরম্যান্ডি পর্যায়ের আলোচনারও পক্ষে ভারত। গঠনমূলক কূটনীতিই এখন একমাত্র পথ।’’ প্রায়ই একই সুরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও বলেন, ‘‘ভারত বিশ্বশান্তির পক্ষে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা নিশ্চিত আলোচনা হলে সমস্যা সমাধানের কোনও না কোনও পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।’’ কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রে খবর, আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়া ও কোয়াড অক্ষের সদস্য দেশগুলি যখন রাশিয়ার কড়া সমালোচনা করছে তখন ভারতের এই ভারসাম্যের কূটনীতি খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না অনেক দেশই। তাদের মতে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সুর না চড়িয়ে দিল্লি কার্যত মস্কোকে সমর্থনই করছে। ফলে এই ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
সম্প্রতি ইউক্রেন প্রসঙ্গে দিল্লির অবস্থানের প্রশংসা করেছে মস্কো। কূটনীতিকদের মতে, আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়ার সুরে সুর মেলাতে আগ্রহী নয় ভারত। তার পরিবর্তে সম্প্রতি কাশ্মীর প্রশ্নে চিনের চাপ সত্ত্বেও ভারতকে সমর্থন করেছে রাশিয়া। তবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দাবি, এমন শর্তে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক চলে না।
ইউক্রেনে বসবাসকারী ২০ হাজার ভারতীয়ই যে তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার তা রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্তৃতাতেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভারতীয় প্রতিনিধি তিরুমূর্তি। ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসের তরফে আজ জানানো হয়েছে, ভারতীয়দের জন্য অতিরিক্ত উড়ানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওই উড়ান সম্পর্কে বিশদ তথ্যও জানিয়েছে তারা। ২৫ ফেব্রুয়ারি ও ৬ মার্চের মধ্যে ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যে চলাচল করবে চারটি উড়ান। সেই সঙ্গে এয়ার অ্যারাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, কাতার এয়ারওয়েজ়ের নিয়মিত উড়ানগুলি নির্দিষ্ট সময়েই ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যে যাতায়াত করছে। কোভিডের ফলে বিদেশ থাকা উড়ানের সংখ্যা ও যাত্রী সংখ্যার উপরে জারি করা নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনের ক্ষেত্রে আপাতত শিথিল করেছে দিল্লি।