সস্ত্রীক গুরমুখ সিংহ। ছবি: এপি।
এ বার হয়তো পাততাড়ি গুটিয়ে ফিরতেই হবে ভারতীয় শিখ ট্যাক্সিচালক গুরমুখ সিংহকে (৪৬)। আমেরিকায় প্রায় দু’দশক কাটিয়ে ফেলার পরেও! গত কালই তাঁকে আটক করেছেন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে গুরমুখকে অবিলম্বে ভারতে পাঠাতে চাইছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
তাঁর অপরাধ? ১৯৯৮-এ পঞ্জাব থেকে বৈধ ভিসা ছাড়াই আমেরিকায় ঢুকেছিলেন গুরমুখ। তখন তিনি অনূর্ধ্ব-৩০। গুরমুখের দাবি, ধর্মের কারণেই দেশছাড়া হতে হয়েছিল তাঁকে। মেক্সিকো সীমান্ত গিয়ে আমেরিকায় ঢোকার বছর খানেকের মধ্যেই তিনি মার্কিন আশ্রয় চেয়ে আর্জি জানান। আর প্রথম শুনানির পরেই তা খারিজ হয়ে যায়। সে বারই তাঁকে ভারতে প্রত্যর্পণের নির্দেশ দেয় মার্কিন অভিবাসন আদালত।
কিন্তু হাল ছাড়তে চাননি গুরমুখ। লড়াইয়ে পাশে পান এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেও। গত কাল তিনি আটক হওয়ার পর যদিও ভেঙে পড়েছে তাঁর পরিবার। স্ত্রী বলবিন্দর কৌর ২০১০-এ মার্কিন নাগরিকত্ব পান। স্বামীর বসবাস নিশ্চিত করতে ২০১২-য় নতুন করে আর্জিও পেশ করেন। কিন্তু তাতেও কাজ কিছু হয়নি। উল্টে পুরনো প্রত্যর্পণ নির্দেশের জের টেনে পরের বছরই ৫ মাসের জন্য জেলে পাঠানো হয় গুরমুখকে।
আবারও কি জেল খাটতে হবে তাঁকে? নাকি ভারতে ফেরা ছাড়া আর রাস্তা নেই? গুরমুখের চোখে জল শুধু পরিবারের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। অভিবাসন দফতরের আধিকারিকরা যখন তাঁকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, পাশেই ছিলেন গুরমুখের বড় মেয়ে মনপ্রীত সাইনি (১৮)। বাবাকে জড়িয়ে ধরেন। পরে কাঁদতে কাঁদতেই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বাবা আমাদের নায়ক। অনেক ঝড় সামলে আমাদের বড় করেন। আজ ভেঙে পড়েছেন। বাবাকে এ ভাবে কাঁদতে দেখিনি এর আগে।’’
শরণার্থী রোখার পাশাপাশি দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসী তাড়াতেও গোড়া থেকে সুর চড়িয়ে আসছেন নয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আপাতত পিছু হটলেও তিনি বদ্ধপরিকর মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তুলতে। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন গুরমুখ সিংহ। ১৮ বছর আগে তিনি যে ওই মেক্সিকো সীমান্ত দিয়েই ঢুকেছিলেন!