ফাইল চিত্র।
গত প্রায় দু’দশকে আফগানিস্তানের গোটা প্রজন্ম এমন ভাবে বড় হয়েছে যে তাঁদের উপর তার আগের প্রায় দু’দশকের ভয়ঙ্কর সময়ের ছায়া সে ভাবে পড়েনি বলে মনে করে দিল্লি। এ কথা জানিয়ে আমেরিকা সফররত বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তব্য, আফগানিস্তানের নতুন প্রজন্মের এই নিরাপত্তাবোধকে সুরক্ষিত রাখা দরকার। ওয়াশিংটনে বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার ঠিক আগে ভারতের বিদেশমন্ত্রীর তরফে বার্তা, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে যেন তাড়াহুড়ো না করে ওয়াশিংটন।
বিষয়টি নিয়ে ভারত যে যথেষ্ট স্পর্শকাতর এবং উদ্বিগ্ন, তা চলতি সফরে স্পষ্ট করে দিতে চান জয়শঙ্কর। আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা যে সরাসরি যুক্ত, এটা বারবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরেছে সাউথ ব্লক। সে দেশে তালিবান শাসনের সন্ত্রাস ফেরা এবং তার রাশ চিনের মদতপ্রাপ্ত ইসলামাবাদের হাতে থাকা— নয়াদিল্লির কাছে বিষয়টি দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। তাই চলতি সফরেও বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী।
আমেরিকার প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টারকে জয়শঙ্কর বলেছেন, “কুড়ি বছরে যে সুফল পাওয়া গিয়েছে (আফগানিস্তানে) তা যত্ন করে রক্ষা করা উচিত। তাকে আজকের রাজনৈতিক সুবিধার্থে হারাতে দেওয়া ঠিক নয়।’’
১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা-সহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলির প্রায় হাজার দশেক সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতের আশঙ্কা, ওই শূন্যস্থানের দখল দ্রুত নিতে এগোবে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর নিয়ন্ত্রণাধীন হাক্কানি গোষ্ঠী। পাশাপাশি লস্কর-ই-তইবা এবং জইশ-ই-মহম্মদের মতো ভারত-বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলিও সক্রিয় হবে কাবুলে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ফলে শুধু ভারত নয়, গোটা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতেই সমস্যা বাড়তে পারে। আইএসআইয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে অতীতে তালিবানের বিভিন্ন গোষ্ঠী একাধিক বার ভারতের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের রাজনীতি এবং বাস্তবতায় ভারতের ভূমিকাও কিছুটা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। সে দেশে প্রভাব বাড়বে রাওয়ালপিন্ডির। আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠকে এই আশঙ্কার দিকগুলিই বিশদে তুলে ধরবেন জয়শঙ্কর।