ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
সন্ত্রাসবাদকে লাগাতার মদত জুগিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ইসলামাবাদ তার ভাবমূর্তি খুইয়ে ফেলেছে। ফলে, পাকিস্তানের আকাশসীমার অনেকটা ভিতরে ঢুকে পড়ে ভারতীয় বায়ুসেনার হানাদারির পর চিনও ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়ায়নি। পাশে দাঁড়ায়নি পাকিস্তানের বহু পুরনো বন্ধু আমেরিকা। ইউরোপের কোনও শক্তিশালী দেশও। সংবাদ সংস্থার প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার এ কথা বলেছেন ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি। তিনি বলেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতির গুরুত্বটা ইসলামাবাদকে এ বার বুঝতে হবে। বুঝতে হবে গোটা বিশ্বই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে। কেউই আর পাকিস্তানের উপর ভরসা রাখতে পারছে না। এটা বুঝে সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়ার রাস্তা থেকে দ্রুত সরে আসতে হবে পাকিস্তানকে। না হলে আন্তর্জাতিক মহলে ইসলামাবাদ তার জমি আরও হারাবে।’’
মঙ্গলবার ভোর রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে সাড়ে ২৩ কিলোমিটার ভিতরে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি ‘মিরাজ-২০০০’ যুদ্ধবিমান। টানা ২১ মিনিট ধরে করা হয় বোমাবর্ষণ। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় জইশ-ই-মহম্মদের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ ঘাঁটি। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে এই প্রথম হামলা চালাল ভারতীয় বায়ুসেনা।
এত বড় ঘটনার পরেও চিন-সহ বিশ্বের কোনও শক্তিশালী দেশ পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়নি, প্রকাশ্যে। বিশেষজ্ঞদের বড় একটি অংশ অবশ্য এতে আদৌ অবাক হননি। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘এটাই স্বাভাবিক ছিল। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের জঙ্গি তোষণ নীতি।’’
আরও পড়ুন- গুলি করে নামানো হয়েছে ভারতের যুদ্ধবিমান, বিবৃতি পাকিস্তানের, দাবি উড়িয়ে দিল ভারত
আরও পড়ুন- যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই, সুর নরম করে বলল পাকিস্তান
ওয়াশিংটনে প্রাক্তন পাক রাষ্ট্রদূতের কথায়, ‘‘কেন চিন নিন্দা করল না, কেন সমালোচনা করল না আমেরিকা, বিশ্বের অন্যান্য শক্তিশালী দেশ? বরং চিন দু’পক্ষকেই বলল সংযত হতে। বুঝিয়ে দিল, ভারতীয় বায়ুসেনার পাক আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনাকে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না তারা। বরং এই পরিণতি বেজিংয়ের প্রত্যাশিতই ছিল।’’
পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক মোটেই ভাল ছিল না ওয়াশিংটনে প্রাক্তন পাক রাষ্ট্রদূতের। বহু বার তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এখনও মৌলবাদীরা তাঁকে হুমকি দেয়।
অধুনা হাডসন ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া দফতরের অধিকর্তা হাক্কানি বলেছেন, ‘‘গোটা বিশ্ব যে পাকিস্তানের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে, সেটা বুঝতে চাইছেন না পাক মৌলবাদীরা। অতি-জাতীয়তাবাদীরা। বা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। এটা পাকিস্তানের পক্ষে ভাল হচ্ছে না।’’
এক সময় পাক প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, অধুনা আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ পিস-এর এশিয়া সেন্টারের অ্যাসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট মইদ ইউসুফও বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদকে লাগাতার মদত দিয়ে গোটা বিশ্বের কাছেই পাকিস্তান তার ভাবমূর্তি খুইয়ে ফেলেছে। আরও স্পষ্ট ভাবে বলব, ভারতের পাশেই সব দেশ। ফলে, পাকিস্তান বালাকোটের ঘটনার বড় বদলা নিতে চাইবে না বলেই মনে হয়। নিলে, তাদের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হবে।’’
ইউসুফ অবশ্য এও জানিয়েছেন, এ বার আমেরিকারই আগ বাড়িয়ে এসে উত্তেজনা কমাতে বলা উচিত ভারত ও পাকিস্তানকে।