রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ইউক্রেনের পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে শান্তির প্রক্রিয়ার দর কষাকষির বিষয়ে লাভরভ মোদীকে জানিয়েছেন।
রুশ বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে সের্গেই লাভরভের সঙ্গে ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
আমেরিকা-ইউরোপের সতর্কতা ছিল। তা সত্ত্বেও রাশিয়ার থেকে সস্তায় তেল কেনা ও ডলার বাদ দিয়ে টাকা-রুবলে আর্থিক লেনদেনের নীতিতেই অনড় থাকছে ভারত।
আজ দিল্লিতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই বৈঠকের পরেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত ইতিমধ্যেই রাশিয়ার থেকে সস্তায় অশোধিত তেল কিনতে শুরু করে দিয়েছে। যদি বাজারের থেকে কম দামে মেলে, তা হলে কেনা হবে না কেন! রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীও জানিয়েছেন, ডলার, ইউরোর মাধ্যমে বাণিজ্য এড়িয়ে টাকা-রুবলের লেনদেনের মাধ্যমে আরও অনেক বেশি পরিমাণে তেল, সামরিক অস্ত্রশস্ত্র বা অন্য পণ্য কেনাবেচা হতে পারে। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে টাকা-রুবলের লেনদেন আরও জোরদার করতে হবে।
আজ রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও দেখা করেছেন। ইউক্রেনের পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে শান্তির প্রক্রিয়ার দর কষাকষির বিষয়ে লাভরভ মোদীকে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, মোদী দ্রুত হিংসা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত যে কোনও ভাবে শান্তি প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে তৈরি বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। লাভরভ নিজেও বলেছেন, ‘‘ভারত যদি সমস্যা মেটাতে কোনও ভূমিকা পালন করতে চায়, যদি সেটা আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে ভারতের যুক্তিসঙ্গত অবস্থানের সঙ্গে মেলে, তা হলে ভারত এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে।’’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতের কূটনৈতিক ভারসাম্যের নীতির প্রশংসা করেছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী। তবে জয়শঙ্কর লাভরভকে বলেছেন, ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন, ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানিয়ে, আলোচনা, কূটনীতির মাধ্যমেই যে কোনও বিবাদ মেটানোর পক্ষে।
লাভরভের ভারত সফরের ঠিক আগেই আমেরিকা, ব্রিটেনের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে এসেছিলেন। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা সত্বেও তা এড়িয়ে মস্কোর সঙ্গে ভারতের লেনদেন নিয়ে সতর্ক করেছিলেন তাঁরা। উল্টো দিকে ভারতের যুক্তি ছিল, ইউরোপের অনেক দেশই তো রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস কিনছে। তা ছাড়া, টাকা-রুবলের মাধ্যমে লেনদেন পুরনো ব্যবস্থা। তাকে নতুন করে মজবুত করা হচ্ছে।
ভারত নিজের প্রয়োজনের ৮৬ শতাংশ তেল বিদেশ থেকে আমদানি করলেও রাশিয়া থেকে ১ থেকে ২ শতাংশ মতো তেল আমদানি করে। রাশিয়া যুদ্ধের আগের দামের থেকে ব্যারেল প্রতি ৩৫ ডলার সস্তা দরে ভারতকে দেড় কোটি ব্যারেল তেল বেচতে রাজি। আজ অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়ার থেকে দেশে তিন-চার দিন জোগান দেওয়ার মতো তেল কেনা হয়েছে। সূত্রের খবর, ইন্ডিয়ান অয়েল ইতিমধ্যেই ৩০ লক্ষ ব্যারেল, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম ২০ লক্ষ ব্যারেল এবং বেসরকারি সংস্থা সিএনই ১৮ লক্ষ ব্যারেল তেল কিনেছে। মে মাসে এই তেল সরবরাহ হবে। সীতারামনের বক্তব্য, ‘‘আমি তো নিজের দেশের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেব। আমি নিজের জ্বালানির নিরাপত্তাই দেখব। যদি সস্তায় জ্বালানি মেলে, তা হলে কিনব না কেন?’’
অন্য দেশের তুলনায় রাশিয়া থেকে ভারত তেল কম কিনলেও, রাশিয়া থেকে ভারত সবথেকে বেশি যুদ্ধাস্ত্র কেনে। ফলে সেক্ষেত্রেও আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে টাকা-রুবলের মাধ্যমে লেনদেন চালু করা জরুরি। অতীতেও এই ব্যবস্থা চালু ছিল। নতুন করে এই ব্যবস্থা জোরদার করতে রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা ভারতে আসতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলছে। এই ব্যবস্থায় ভারতে অবস্থিত রাশিয়ার ব্যাঙ্কের শাখায় আমদানিকারীরা পণ্যের দাম বাবদ টাকা জমা করবেন। ওই ব্যাঙ্ক রাশিয়ার রফতানিকারীকে রুবলে তা মিটিয়ে দেবে।
যুদ্ধের সুযোগে এ দেশের রফতানিকারীরাও রাশিয়ায় রফতানি বাড়াতে চাইছেন। টাকা-রুবলের বিনিময় মূল্যের ওঠানামার ফলে লোকসান হলে তা কে, কী ভাবে বহন করবে, তা নিয়ে দর কষাকষি চলছে। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত যা-ই কিনতে চাইবে, আমরা তা জোগান দেওয়ার পক্ষে।’’