আফগানিস্তানে ভারতীয় আর মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি আতঙ্কে রাখছে পাকিস্তানকে। —ফাইল চিত্র।
আফগান ভূখণ্ডে গড়ে উঠেছে পাকিস্তান বিরোধী সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি। ভারত নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের। আর তারাই নাশকতা চালাচ্ছে পাকিস্তানে। এমনই দাবি পাকিস্তানের শীর্ষ সেনাকর্তাদের। পাক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের সঙ্গে এক বৈঠকে পাক সেনার কোর কম্যান্ডারদের দাবি, ভারতের এই ‘ষড়যন্ত্র’কে সাহায্য করতে পাকিস্তানের অন্দরেই নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। কোয়েটা বিস্ফোরণও সে ভাবেই ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছে পাক সেনা।
বালুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটায় সোমবার বিস্ফোরণের পর প্রাথমিক তদন্ত না করেই সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছিলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এই বিস্ফোরণের পিছনে রয়েছে। অন্তত ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে কোয়েটা সিভিল হাসপাতালের ওই বিস্ফোরণে। শহরের আইনজীবীদের প্রায় গোটা একটা প্রজন্ম মুছে গিয়েছে ওই মর্মান্তিক ঘটনায়। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতির দায় স্বাভাবিক ভাবেই সরকার তথা সেনার ঘাড়ে চাপছে। অস্বস্তি ঢাকতে এ বার ভারতের উপর দায় চাপানো শুরু হয়েছে।
তেহরিক-ই-তালিবান বা পাক তালিবান এই হামলার দায় নিয়েছে। কিন্তু পাক সেনার দাবি, এর পিছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। পাক তালিবান, বালুচ, পাখতুন সহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী আফগান ভূখণ্ডে ঘাঁটি গেড়ে পাকিস্তানে নাশকতা চালাচ্ছে বলে পাক সেনাকর্তারা অভিযোগ করছেন। এই সব জঙ্গিগোষ্ঠীকেই এখন ‘র’ নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও তাঁদের দাবি। পাক সেনার সদর দফতর রাওয়ালপিন্ডিতে মঙ্গলবার ‘কোর কম্যান্ডারস কনফারেন্স’ আয়োজিত হয়েছিল। প্রতি মাসেই এক বার এই রিভিউ বৈঠক হয়। পাক সেনাপ্রধান বাহিনীর অন্য শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে এই বৈঠকে আলোচনায় বসেন। মঙ্গলবারের বৈঠকে কোয়েটা বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ স্বাভাবিক ভাবেই প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছিল বলে পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর। পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে হঠাৎ করে সন্ত্রাসবাদী হামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পিছনে ভারতের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে বলে পাক সেনার অধিকাংশ শীর্ষকর্তাই দাবি করেছেন বলেও জানা গিয়েছে।
আফগান তালিবানের হাত থেকে আফগানিস্তান মুক্ত হওয়ার পর আমেরিকা এবং ভারত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সে দেশের পুনর্গঠনে জোর দিয়েছে। আফগান সেনাকেও বিভিন্ন দিক থেকে শক্তিশালী করে তুলছে ভারত। ভারত-আফগান ঘনিষ্ঠতাকে ইসলামাবাদ মোটেই ভাল চোখে দেখছে না। নিজেদের দেশের দু’পাশেই ভারতের মজবুত উপস্থিতি পাক সেনার দীর্ঘ দিনের অস্বস্তির কারণ। দিন দিন আফগান সেনাবাহিনী যে ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, পাকিস্তানের পক্ষে তাও এক অশনি সঙ্কেত। তাই আফগানিস্তানের উপর চাপ বাড়িয়ে নয়াদিল্লি-কাবুল সখ্য ভাঙতে তৎপর ইসলামাবাদ। আফগান সরকার অবশ্য পাকিস্তানের ভারতো বিরোধিতাকে একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং পাক ভূখণ্ড ব্যবহার করে জঙ্গিরা আফগানিস্তানে কী ভাবে নাশকতা চালাচ্ছে এবং পাক সেনা কী ভাবে তাদের সাহায্য করছে, আন্তর্জাতিক মহলে তা নিয়েই সরব হয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘানি।
পাকিস্তান এখন পাল্টা দাবি করছে, আফগানিস্তানের মাটিই ব্যবহৃত হচ্ছে পাকিস্তানে সন্ত্রাস চালানোর জন্য। এবং তা ভারতই করাচ্ছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা নিয়ে মঙ্গলবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জেনারেল রাহিল শরিফকে পাক সেনার অন্য শীর্ষকর্তারা জানিয়েছেন, ‘র’ পাকিস্তানের মধ্যেও নিজেদের মজবুত নেটাওয়ার্ক তৈরি করে ফেলেছে। আফগানিস্তান থেকে যারা নাশকতা ঘটাতে পাকিস্তানে ঢুকছে, ‘র’-এর নেটওয়ার্ক তাদের কাজ আরও সহজ করে তুলছে। পাকিস্তানের মধ্যে যারা এই নাশকতার নেটওয়ার্কের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, আগে তাদের খুঁজে বার করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাক সেনা।
প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই নৈকট্যই কি পাক অস্বস্তির কারণ?
ভারতীয় কূটনীতিকরা অবশ্য পাক সেনার এই দাবি সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিচ্ছেন। পাকিস্তান গোটা বিশ্বে এখন সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। সেই তকমা ঘোচাতে এখন ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে পাকিস্তান, বলছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের একাংশের মতে, কাবুল-নয়াদিল্লি ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকায়, আতঙ্কে রয়েছে পাক সেনা। নিজেদের যে কোনও ব্যর্থতাতেই এখন ভারতের ভূত দেখছে ইসলামাবাদ। তাই ভারতের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ চিন সাগরে রকেট লঞ্চার মোতায়েন করল ভিয়েতনাম, সতর্ক চিন