ক্ষমতাশালী দেশের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ভারত।
নোভেল করোনা এবং একটানা লকডাউনের জেরে ধাক্কা খেয়েছে দেশের অর্থনীতি। সেই কারণে একটুর জন্য অন্যতম ক্ষমতাশালী দেশ হয়ে উঠতে পারল না ভারত। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্ষমতার লড়াইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং জাপানের কাছে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছে ভারত।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কোন দেশের কেমন প্রভাব তা নিয়ে প্রতিবছরই রিপোর্ট প্রকাশ করে সিডনির থিঙ্কট্যাঙ্ক সংস্থা লোয়ি ইনস্টিটিউট। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তাদের এই রিপোর্টকে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য বলে ধরা হয়। ২৬টি দেশ ও অঞ্চলসমূহকে নিয়ে তৈরি তাদের এ বছরের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ক্রমশ শিথিল হচ্ছে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যে রাষ্ট্রগুলির প্রভাব ও প্রতিপত্তি সবচেয়ে বেশি, ৮১.৬ পয়েন্ট পেয়ে সেই সূচকে এখনও শীর্ষেই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলছে চিন। ৭৬.১ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা। দুই দেশই মহাক্ষমতাশালী দেশ হিসেবে গন্য হয়েছে। কিন্তু দু’বছর আগে যেখানে চিনের থেকে ১০ পয়েন্ট এগিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এ বারে সেই ব্যবধান অর্ধেকে এসে ঠেকেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের এই লড়াইয়ে নোভেল অতিমারির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মত কূটনীতিবিদদের। তাঁদের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ঢের ভাল ভাবে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে চিন। তাই তাদের প্রতি আস্থা বাড়ছে সকলের।
আরও পড়ুন: পুজো প্যান্ডেলে দর্শক নয়, স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট
লোয়ি ইনস্টিটিউটের এশীয় শক্তি ও কূটনীতি বিভাগের ডিরেক্টর তথা এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা হার্ভি লেমাহিউয়ের মতে, শুরু থেকে করোনা পরিস্থিতিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ ছাড়াও শুল্কযুদ্ধ এবং একাধিক বাণিজ্য চুক্তি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তরও মাসুল দিতে হচ্ছে তাদের।
নোভেল করোনার জেরে উদ্ভুত অতিমারির জন্য শুরু থেকেই চিনকে দায়ী করে আসছে মার্কিন সরকার। কিন্তু গত কয়েক মাসে চিন পরিস্থিতি আয়ত্তে এনে ফেললেও, মার্কিন মুলুকে সংক্রমণ এবং মৃত্যু উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। মূলত সে কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর থেকে মানুষের আস্থা চলে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন হার্ভি। তাঁর কথায়, ‘‘অতিমারিই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিল। এর প্রভাবেই মার্কিন মুলুকে হাহাকার নেমে এসেছে। এক দিকে কোভিড সঙ্কট, অন্য দিকে অর্থনৈতিক সঙ্কট। অতিমারির প্রকোপে মার্কিন অর্থনীতির যা ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হতে বেশ কয়েক বছর লেগে যাবে।’’
লোয়ি ইনস্টিটিউট আরও জানিয়েছে, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে ২০২৪ সালের আগে মার্কিন অর্থনীতির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সংক্রমণকেই শুধু নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেনি চিন, অর্থনীতির গতিও ফেরাতে শুরু করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চিনই একমাত্র দেশ, ২০২০ সালেই যাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে তাদের উপরই বেশি ভরসা করছে প্রতিবেশী দেশগুলি।
আরও পড়ুন: লাদাখে ভারতীয় সেনার হাতে আটক এক চিনা সেনা
উহানে করোনাার উৎপত্তি হোক বা ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ, চলতি বছরে নানা কূটনৈতিক বাধাবিপত্তির মুখেও পড়তে হয়েছে চিনকে। তার পরেও দ্বিতীয় স্থান টিকিয়ে রাখতে পেরেছে তারা, যা ভাল লক্ষণ বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদরা। সেই তুলনায় আমেরিকার অবস্থান খুব একটা ভাল নয় বলে মত তাঁদের। বলা হচ্ছে, এ বছর ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে এশিয়ার অনেক দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্ষমতাশালী দেশগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জাপান। ৪১ পয়েন্ট পেয়ে অন্যতম ক্ষমতাশালী দেশ হিসেবে উঠে এসেছে তারা। অন্যতম ক্ষমতাশালী দেশ হওয়ার জন্য ন্যূনতম ৪০ পয়েন্ট পেতে হয়। সেখানে ভারত পেয়েছে ৩৯.৭ পয়েন্ট। সূচকে চতুর্থ স্থানে জায়গা পেলেও, একটুর জন্য অন্যতম ক্ষমতাশালী দেশ হতে পারেনি ভারত। তার বদলে জায়গা হয়েছে মাঝারি ক্ষমতাশালী দেশগুলির মধ্যে। করোনার প্রকোপে ভারতের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা, কৌশলগত ভাবে চিনের সঙ্গেও সে ভাবে পেরে ওঠা যাচ্ছে না, তাই ২০৩০-এর আগে চিনের অর্থনীতির ৪০ শতাংশে পৌঁছনো ভারতের পক্ষে সম্ভব হবে না বলে দাবি ওই সংস্থার। গতবছর তারা জানিয়েছিল, ২০৩০ নাগাদ চিনের অর্থনীতির ৫০ শতাংশে পৌঁছতে পারবে ভারত।
এই সূচকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাশিয়া। ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর রয়েছে যথাক্রমে সপ্তম ও অষ্টম স্থানে। নবম ও দশম স্থানে যথাক্রমে রয়েছে তাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া।