আর্জেন্টিনা থেকে লিথিয়াম আমদানী ভারতের। ছবি সংগৃহীত।
দিয়েগো মারাদোনা আর লিয়োনেল মেসির দেশ থেকে লিথিয়াম আমদানি করতে চিনের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ভারত।
ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনা বিশ্বের অন্যতম লিথিয়াম-সমৃদ্ধ দেশও বটে। লিথিয়ামে চোখ রেখেই লাতিন আমেরিকার এই দেশের সঙ্গে গত এক বছর ধরে বিভিন্ন স্তরে দৌত্য করে চলেছে নয়াদিল্লি। এখনও পর্যন্ত চিনকে সর্বাধিক লিথিয়াম আকর সরবরাহ করে আর্জেন্টিনা। এ দিকে, ভারতকে নিজের তেলের চাহিদার ৮৫ শতাংশই বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। সেই খরচ কমাতে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারে জোর দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু সেই গাড়িগুলিতে ব্যবহৃত ব্যাটারির লিথিয়াম ভারতে মেলে না। আর আর্জেন্টিনার সঞ্চয়ে রয়েছে এক কোটি নব্বই লক্ষ টন লিথিয়াম।
তাই আর্জেন্টিনার মন জয়ে ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষি লেখি গত মাসে ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনালের দিনেই পৌঁছে গিয়েছিলেন নয়াদিল্লিতে আর্জেন্টিনার দূতাবাসে। রাষ্ট্রদূত উগো হ্যাভিয়ার গোবির সঙ্গে বসে তিনি দেখেন মেসি বনাম এমবাপের লড়াই। মীনাক্ষি সমর্থন করেন আর্জেন্টিনাকেই! কূটনৈতিক সূত্রের মতে, তাঁর এই ফুটবল-মৈত্রীর নির্দিষ্ট কারণ ছিল। ফাইনালে মেসিরা জেতার পরেই আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদী।
গত বছর এপ্রিলে ভারতের আমন্ত্রণে নয়াদিল্লি এসেছিলেন আর্জেন্টিনার বিদেশমন্ত্রী সান্তিয়াগো কাফেইরো। তখনই লিথিয়াম আমদানি নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর। এরপরে জুনে মিউনিখে জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন মোদী। অগস্টে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যান আর্জেন্টিনায়। দু’দেশের মধ্যে খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত চুক্তিপত্র সই হয়। নভেম্বরে ভারতের বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় ভূতত্ত্ববিদকে আর্জেন্টিনা পাঠানো হয়। তাঁরা সে দেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার লিথিয়াম নিষ্কাশন প্রকল্প খুঁটিয়ে দেখেন। এর পরে ভারতের একটি সংস্থার সঙ্গে আর্জেন্টিনার সংস্থা সে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দু’টি খনি থেকে (লা আগুডা এবং এল ইন্ডিয়ো) যৌথ ভাবে লিথিয়াম নিষ্কাশনের বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে খবর।
আর্জেন্টিনার পাশাপাশি চিলি এবং বলিভিয়ার লিথিয়াম খনির দিকেও নজর রেখেছে সাউথ ব্লক। বিশ্বের মোট লিথিয়ামের প্রায় ৬০ শতাংশ রয়েছে এই তিনটি দেশে। তবে এ সব সত্ত্বেও চিনের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে ভারত। বিশ্বের মোট ৫৬ শতাংশ লিথিয়াম ব্যাটারি চিন রফতানি করে। লিথিয়ামের বেশির ভাগ শোধনাগার চিনে। ফলে জোগান-শৃঙ্খলের রাশ তাদেরই হাতে।