China

ভারত ও চিন, কেউই চায় না ট্রাম্পের দৌত্য

লাদাখে ভারত- চিন উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে কিছুটা আচমকাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি টুইট করে বসেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২০ ০৩:০৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

ভারত, চিন এবং আমেরিকার ত্রিকোণমিতি এমন একটি কূটনৈতিক ধাঁধা তৈরি করল, যা স্মরণকালে দেখেনি দুনিয়া। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে লাদাখে ভারত- চিন উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে কিছুটা আচমকাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি টুইট করে বসেছিলেন গত কাল। সেখানে তিনি সীমান্ত সংঘাতের মুখোমুখি দাঁড়ানো ভারত এবং চিনের মধ্যে মধ্যস্থ হওয়ার প্রস্তাব দেন। আজ তার থেকে আরও এক পা এগিয়ে তিনি হোয়াইট হাউসে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা হয়েছে। চিন খুব খারাপ কাজ করছে, মোদীর মেজাজ খুবই খারাপ!

Advertisement

ট্রাম্পের এই মন্তব্যে কিছুটা অস্বস্তিতে সাউথ ব্লক। সরকারি ভাবে ট্রাম্পের এই মন্তব্য নিয়ে মুখ খোলেনি বিদেশ মন্ত্রক। কিন্তু সূত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, ৪ এপ্রিলের পরে ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর কোনও কথা হয়নি। চিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, ভারত এবং চিন নিজেরাই আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনে সক্ষম। তৃতীয় পক্ষের (আমেরিকা) নাক গলানোর প্রয়োজন নেই। ভারতও গত কাল বিবৃতি দিয়ে বলেছে চিনের সঙ্গে একাধিক সীমান্ত চুক্তি এবং প্রটোকল রয়েছে। কূটনৈতিক এবং সামরিক আলোচনার মাধ্যমে জট কাটানোরই পক্ষপাতী দিল্লি।

টুইটে ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, তিনি এই মধ্যস্থতার প্রস্তাব এর আগেই চিন এবং ভারতকে নাকি দিয়েছেন। আর আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওয়াশিংটনে তিনি বলেন, “ভারত এবং চিনের মধ্যে বড় মাপের সংঘাত চলছে। দু’দেশেরই শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে। ভারত খুশি নয়, সম্ভবত চিনও নয়। তবে আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলেছি। চিন যা করছে, তাতে তাঁর মেজাজ একেবারেই ভাল নেই।” ট্রাম্প এ কথাও জানাতে ভোলেননি, তিনি ভারতকে খুবই ভালবাসেন। ব্যঙ্গের ছলে তিনি বলেন, নিজের দেশের মিডিয়ার তুলনায় ভারতে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

Advertisement

এমনিতেই বেজিংয়ের সঙ্গে সংঘাতময় সময়ের মধ্যে দিয়ে চলছে নয়াদিল্লি। সীমান্তে পরিকাঠামো তৈরি নিয়ে চিনের বিষ নজরে রয়েছে মোদী সরকার। আমেরিকার সঙ্গে দিল্লির ঘনিষ্ঠতাও সুনজরে দেখছে বেজিং। এখন ট্রাম্প বিষয়টিকে খুঁচিয়ে ঘা করছেন বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। দ্বিপাক্ষিক সঙ্কট নিরসনে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ নীতিগত ভাবে বর্জন করে চলে সাউথ ব্লক। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প যে ভাবে খোলাখুলি ভারতকে নিজের বন্ধনীতে নিয়ে চিনকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইছেন, তা নয়াদিল্লির পক্ষে বিড়ম্বনার। ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে যাওয়া অর্থনীতিকে পুঁজি করে, এই প্রবল করোনা সঙ্কটের মধ্যে চিনের মতো প্রবল শক্তিধর প্রতিবেশীর সঙ্গে মল্লযুদ্ধে যেতে চায় না মোদী সরকার।

গোটা বিষয় নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতেও চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী টুইট করে বলেছেন, ‘সঙ্কটের সময় সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সরকার মৌন থাকার ফলে, প্রবল অনিশ্চয়তা এবং বিভিন্ন ব্যাখ্যা তৈরি হচ্ছে। ভারত সরকার স্পষ্ট ভাবে জানাক, ঠিক কী ঘটছে।’

এরই মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ কথা বলেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক টি এস্পারের সঙ্গে। দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সমঝোতা বাড়ানো নিয়ে কথা হয়েছে। তাঁকে ভারত সফরে আমন্ত্রণও জানিয়ে রেখেছেন রাজনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement