প্রেসিডেন্ট হিসেবে একশোতম দিনটা হোয়াইট হাউসে রইলেন না। তেমন প্রতিশ্রুতি অবশ্য আগেই ছিল। যে জনতার ভোটে হোয়াইট হাউস পর্যন্ত পৌঁছেছেন, পেনসিলভ্যানিয়ায় হ্যারিসবার্গে এক সভায় সেই জনতার কাছেই ফিরে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গোড়া থেকেই তিক্ত। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে পরেই এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে দিয়েছিলেন, একশো দিনের দিন হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকদের আয়োজন করা বিশেষ নৈশভোজে তিনি থাকবেন না। রোনাল্ড রেগন ছাড়া আর কোনও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এই নৈশভোজ বাদ দেননি। আর রোনাল্ডেরও অনুপস্থিতির কারণটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। সে দিনই তাঁর উপরে আক্রমণের চেষ্টা হওয়ায় উনি ওয়াশিংটন হিল্টনে পৌঁছতে পারেননি। সেই হোটেলেই এ বারও ভোজসভা ছিল। ছিলেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
পেনসিলভ্যানিয়ায় ট্রাম্পের জয় আসবে কি না, তা নিয়ে কিছুটা ধন্দ ছিল। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে সেখানে গিয়ে তাঁর কট্টর সমর্থকদের ট্রাম্প বলে গেলেন, তাঁর প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করেছেন। ওয়াশিংটনের সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে পেনসিলভ্যানিয়ার সভাই কেন তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, বক্তৃতায় বুঝিয়েছেন ট্রাম্প: ‘‘হলিউডের অভিনেতাদের একটা বড় অংশ এবং ওয়াশিংটনের সাংবাদিককুল আমাদের রাজধানীতে বসে একে অপরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ১০০ মাইল দূরে এই বিরাট সভায় আপনাদের মতো ভাল মানুষের সঙ্গে বসে অসাধারণ লাগছে।’’
হোয়াইট হাউস সাংবাদিক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট জেফ ম্যাসন পাল্টা বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের ভিত্তি। সাংবাদিকের স্বীকৃতি না দেওয়া কোনও সুস্থ দেশের লক্ষণ নয়।’’ ওই নৈশভোজেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যঙ্গশিল্পী হাসান মিহনাজ ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলেন, ‘‘আমাদের দেশের নেতা এখানে নেই। কারণ তিনি তো মস্কোয় থাকেন। অনেক দূরের পথ। আর অন্য জন তো পেনসিলভ্যানিয়ায়। কারণ উনি ঠাট্টাও সহ্য করতে পারেন না!’’
ট্রাম্প অবশ্য এ সব মন্তব্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তাঁর সাফ কথা, সংবাদমাধ্যমের ‘বিরাট ব্যর্থতা’ ছাড়া তিনি কিছু দেখতে পাচ্ছেন না।
হ্যারিসবার্গেই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, একশো দিনে যা পারেননি, আগামী সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যেই সেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। ইতালিতে জি-৭-এর শীর্ষ বৈঠক রয়েছে আগামী ২৬ এবং ২৭ মে। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, তার আগেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে পারে।
এই চুক্তি ‘একপেশে’ এবং ‘অবিলম্বে আমেরিকার সরে আসা উচিত’ বলে হোয়াইট হাউসে আসার আগে থেকেই সুর চড়়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাজটা যে সহজ নয়, বুঝতে পারেন ক্ষমতায় আসার পর-পরই। ডেমোক্র্যাটদের তরফে তো বটেই, প্রশাসনেরও একাংশ এ নিয়ে বেঁকে বসেন। আমেরিকা যাতে কোনও ভাবেই এই চুক্তি খারিজ না করে, তা নিয়ে ফের দেশজোড়া বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশ।
ট্রাম্প তবু আগের অবস্থানেই অনড়। এ ব্যাপারে ভারতকেও তিনি ছাড় দেননি। হোয়াইট হাউসে আসার ১০০ দিনে পা রেখে শনিবারই ফের তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক এই চুক্তিকে সম্মান জানিয়ে বরাবরই আমরা সবার আগে ছুটে গিয়েছি। যাবতীয় খরচ বহন করেছি। একের পর এক বাধাও সামলেছি। কিন্তু
চিন, রাশিয়া কিংবা ভারতের মতো দেশ এই চুক্তির শুধু সুবিধাগুলিই নিয়েছে, বিনিময়ে কিচ্ছুটি করেনি। তাই সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’
কী সেই সিদ্ধান্ত, মুখিয়ে গোটা বিশ্ব।