ইমরান খান। —ফাইল চিত্র।
কারাদণ্ড ঘোষণার পরে ইসলামাবাদের আদালত রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলের সুপারকে বলেছিল ইমরান খানকে হেফাজতে নিতে। তবে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে পাক পঞ্জাবের অটক জেলে রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রস্তুত করা বিশেষ সেলে রয়েছে পাখা, বিছানা এবং শৌচাগার। তবে বাতানুকূল যন্ত্র নেই।
গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড ধরে যাওয়ার পথে পাকিস্তান পঞ্জাবের শেষ বড় শহর অটক। সিন্ধু নদীর তীরে। নদীর অন্য পাড় খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশ। এই অটক শহরে এক এক সময় বন্দি থেকেছেন পাকিস্তানের নামজাদা রাজনীতিকেরা। দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে এক সময় অটক দুর্গে বন্দি থাকতে হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জ়ারদারিকে। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ ১৯৯৯ সালে যখন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী, তখন দুর্নীতির দায়ে বন্দি ছিলেন অটক দুর্গে। সে দিক থেকে দেখলে ইমরানই দেশের প্রথম কোনও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, যাঁকে অটক জেলে বন্দি রাখা হয়েছে। পাক পঞ্জাবের ৪০টি জেলের মধ্যে অন্যতম এই কারাগার।
আজ তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, অটক জেলের সুপার এবং পঞ্জাব প্রদেশের অতিরিক্ত স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে পদ্ধতি মেনে আবেদন করা হলেও ইমরানের সঙ্গে তাঁর আইনজীবীদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথিতে সই করানো যাচ্ছে না তাঁকে দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশ থেকে পাওয়া নানা উপহার বেআইনি ভাবে বিক্রি করায় অভিযুক্ত ইমরান। তোশাখানার হিসাবে গরমিল সংক্রান্ত মামলায় গত কাল তাঁর তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তার পরেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। গত কালই পিটিআইয়ের লাহোর হাই কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছে। আদালত ইসলামাবাদ পুলিশের আইজি-কে ইমরানকে গ্রেফতার করার এবং আদিয়ালা জেলের সুপারকে তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। অভিযোগ, পঞ্জাব পুলিশ কোনও কোর্ট অর্ডার না-দেখিয়ে স্রেফ বন্দুকের ডগা দিয়ে তাঁকে ‘অপহরণ’ করে অটক জেলে পাঠিয়েছে। নিয়ম মতো সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও হয়নি।
গ্রেফতারির পরে আগে থেকে তৈরি করে রাখা ইমরানের একটি ভিডিয়ো বার্তা সামনে আসে। তাঁর অনুপস্থিতিতে পিটিআইয়ের দায়িত্ব নিয়ে শাহ মাহমুদ কুরেশিও একটি ভিডিয়ো বার্তা দিয়েছেন। দু’টিতেই দলের কর্মী-সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়। তা ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। কিন্তু আজ পাকিস্তানের রাস্তায় খুব বড় কোনও জমায়েত চোখে পড়েনি, যেমনটা গত ৯ মে ইমরান গ্রেফতার হওয়ার পরে দেখা গিয়েছিল। আজ দেশে পিটিআইয়ের মোট ৬৭ জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।
৯ মে একটি দুর্নীতির মামলায় ইমরানের জেলযাত্রার পরে তাঁর দলের প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং সেনার সৌধে হামলার অভিযোগ ওঠে। কুরেশি এ বার দলের জরুরি বৈঠক করেছেন। বিচারে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে যত দ্রুত সম্ভব শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত হয় সেখানে। দাবি, ইমরানের অনুপস্থিতিতে শুনানি করে সাজা দেওয়া হয়েছে তাঁকে, যা পাকিস্তানের আইনে ন্যায্য নয়।
গ্রেফতারির আগে সাক্ষাৎকারে ইমরান দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ছ’মাসে ১৮০টি মামলা হয়েছে। সত্তর শতাংশ মানুষের সমর্থন তাঁর সঙ্গে। প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, তাঁকে রুখতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। ইমরানকে আগামী পাঁচ বছর সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। চলতি বছরের শেষে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের সম্ভাবনা। তবে, গত কালই দেশের নতুন জনশুমারির রিপোর্ট প্রকাশের পরে তা পিছোনো নিয়ে জল্পনাও চলছে।