পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: রয়টার্স।
পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় নিহত জওয়ানদের প্রসঙ্গ তুলে শনিবার বিরোধীদের আক্রমণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রবিবার জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে একই কায়দায় রাজনীতিতে ‘টেনে আনলেন’ পাক সেনাকে। তাঁর অভিযোগ, বিরোধী দলগুলি সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে।
পাক অধিকৃত গিলগিট-বালটিস্তানের '৭৩ তম স্বাধীনতা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত ‘আজাদি কুচকাওয়াজে’ এ দিন যোগ দেন ইমরান। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা যে ভাবে সেনাপ্রধান এবং আইএসআই মহানির্দেশকের বিরোধিতা করছেন তাতে বুঝতে পেরেছি, আমি সঠিক ব্যক্তিদেরই নিয়োগ করেছি। কারণ বিরোধীদের লক্ষ্যই হল সেনাকে দুর্বল করা।’’
পাকিস্তান রাজনীতিতে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বিরোধী জোট ‘পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট’ (পিডিএম) ইমরানের ইস্তফার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করেছে। পাশাপাশি, পক্ষপাতদুষ্ট ও অসাংবিধানিক আচরণের অভিযোগে পাক সেনাপ্রধান কমর জাভেদ বাজওয়ার বিরুদ্ধেও উঠেছে ‘মুর্দাবাদ’ স্লোগান। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল (এন) এবং নিহত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাবলের পিপিপি-র নেতৃত্বাধীন জোটে সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও ৯টি দল। লাহৌর, করাচি-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে বিরোধীদের সভায় বিপুল জমায়েত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদ ফুরনোর তিন বছর আগেই ইমরান প্রবল চাপে পড়েছেন বলে সে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
ইমরানের বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়েছে বৃহস্পতিবার পাক পার্লামেন্টে সে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীর মন্তব্য। ২০১৯-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে পাক জঙ্গি হামলাকে সরাসরি ‘ইমরান সরকারের সাফল্য’ বলে দাবি করে বসেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। পাক মন্ত্রীর ওই ‘স্বীকারোক্তি’র পরে পুলওয়ামা নিয়ে বিরোধীদের কোণঠাসা করতে সক্রিয় হয়েছেন মোদীও। শনিবার গুজরাতে সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, ‘‘সে দিন সন্তানহারা হয়ে গোটা দেশ শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল। কিন্তু কিছু মানুষ সেই শোকে শামিল হননি। তাঁরা পুলওয়ামা হামলা নিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির রাস্তা খুঁজছিলেন।’’
আরও পড়ুন: মানবদেহে তৃতীয় দফায় কোভ্যাক্সিন টিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি এমস-এ
পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধীদের আন্দোলনের চাপে নতিস্বীকার করার বদলে প্রত্যাঘাতের রাজনীতির পথেই হাঁটতে চান ইমরান। এ ক্ষেত্রে বিরোধীদের নিশানা করতে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে ‘অস্ত্র’ করতে পারেন তিনি। এ দিন হিসেব কষেই তিনি জাতীয় নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বিরোধীদের কাঠগড়ায় তোলার জন্য গিলিগিট-বালটিস্তানকে বেছে নিয়েছেন। ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে নিহত পাক সেনা ও মুজাহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হল তামিলনাড়ুর কৃষিমন্ত্রীর
ব্রিটিশ জমানায় ‘রাজন্যশাসিত রাজ্য’ জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ ছিল কারাকোরাম পর্বত ঘেরা গিলগিট-বালটিস্তান। পাকিস্তান ১৯৪৮ সালে জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকার কিছু অংশের পাশাপাশি ওই অঞ্চলটিও দখল করে। কিন্তু পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্ফরাবাদের প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে না এনে ‘ফেডেরালি অ্যাডমিনিস্টারড নর্দার্ন এরিয়া’ নাম দিয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা হয় সেই অঞ্চলকে। ‘স্বাধীনতা দিবস’ নাম দিয়ে পৃথক ভাবে ওই অঞ্চল দখলের দিনটি উদ্যাপন করা হয়।