রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৫তম সাধারণ সভার বক্তৃতায় পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি পিটিআই।
শুধু কাশ্মীর নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৫তম সাধারণ সভার বক্তৃতায় খোলাখুলি হিন্দু-মুসলিম তাসই খেলে দিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে নাৎসি পার্টির সঙ্গে তুলনা করলেন। বাবরি মসজিদ ধ্বংস থেকে শুরু করে গুজরাত দাঙ্গা, দিল্লির সংঘর্ষ— একের পর এক উদাহরণ দিয়ে অভিযোগ তুললেন, ভারতে মুসলিমরাই নির্যাতনের শিকার।
ভিডিয়ো লিঙ্কে পর্দায় পাক প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শুরু হতেই রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি ওয়াক আউট করেন, যাকে চরম কূটনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবেই দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। পরে টুইটারে তিরুমূর্তি লেখেন, ‘‘কূটনৈতিক নিম্নগামিতার নতুন স্তরে পৌঁছল পাক প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা। তা মিথ্যা, ব্যক্তিগত আক্রমণ, যুদ্ধবাজ মনোভাবে পরিপূর্ণ। পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের দুর্দশা, সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয়গুলি অন্ধকারেই রয়ে গেল। জবাব দেওয়ার অধিকার যথাযোগ্য ভাবেই প্রয়োগ করা হবে।’’ আগামিকাল সাধারণ সভায় বক্তৃতা দেওয়ার কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।
ইমরান আজ বলেন, ‘‘নাৎসিদের বিদ্বেষের লক্ষ্য ছিলেন ইহুদিরা। আরএসএসের নিশানা মুসলিমরা। খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে কিছুটা কম। গাঁধী-নেহরুর ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে এখন এসেছে হিন্দু রাষ্ট্র তৈরির স্বপ্ন। যেখানে লক্ষ্য হল, মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের শাসন করা, এমনকি মুছে ফেলা।’’ ইমরানের অভিযোগ, দিল্লির সংঘর্ষে নিশানা করে মারা হয় মুসলিমদের। গুজরাত দাঙ্গায় সংখ্যালঘুদের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এটা হয়েছিল (তৎকালীন) মুখ্যমন্ত্রী মোদীর শাসনে।’’ ইমরানের বক্তব্য, অভূতপূর্ব ভাবে ‘হিন্দুত্বের আদর্শে’ ৩০ কোটি মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখেদের নির্যাতন করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতেও মোদী সরকার বৈষম্যমূলক নীতি নিয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি জানান, ভারতে সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য দায়ী করা হয়েছে মুসলিমদের। অথচ তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসা পাননি।
বরাবরের মতো কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ ঘিরে বাহিনীর জুলুমের অভিযোগ তুলেছেন ইমরান। ‘মানবতা-বিরোধী অপরাধে’ ভারতের সামরিক-অসামরিক কর্তাদের বিচার চেয়েছেন। অভিযোগ করেছেন, কাশ্মীরের জনবিন্যাস পাল্টে দিতে চাইছে মোদী সরকার, যা যুদ্ধাপরাধের শামিল। তাঁর বক্তব্য, বিশ্বের নজর ঘোরাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক সক্রিয়তা দেখিয়ে ‘বিপজ্জনক খেলা’ খেলছে ভারত। কিন্তু ‘ফ্যাসিস্ট আরএসএস নেতৃত্বাধীন’ ভারত সরকার ‘অপচেষ্টা’ করলে পাকিস্তানও লড়তে তৈরি।