—প্রতীকী চিত্র।
জোট না হলে ভোট বাড়বে—অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে ভরাডুবির পরে বাম ও কংগ্রেস নেতাদের অনেককে আড়ালে এমন মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে। তালড্যাংরা উপনির্বাচনে দু’পক্ষের মধ্যে জোট না হওয়ায় সেই মতের যর্থাথতা জরিপের সুযোগ ছিল। তবে ফলাফলে দেখা গেল, গত নির্বাচনগুলির সঙ্গে ফারাক বিশেষ হয়নি। ‘নোটা’র চেয়ে কিছু ভোট বেশি পেয়ে মুখরক্ষা হলেও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থীর।
উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী দেবকান্তি মহান্তি ভোট পেয়েছেন ১৯,৪৩০টি। কংগ্রেস প্রার্থী তুষারকান্তি ষণ্ণিগ্রহীর প্রাপ্ত ভোট ২,৮২২টি। দু’দলের মোট প্রাপ্ত ভোট ২২,২৫২টি। কয়েক মাস আগে হওয়া লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে জোট হিসেবে বাম-কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ১৬,৫২৫টি। লোকসভার তুলনায় সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো ভোট বেশি মিললেও তা ২০২১ বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটকে (২৩,১৮৯টি) টপকাতে পারেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে মানুষ ভোট দেন। তাই ওই ভোটের সঙ্গে বিধানসভার তুলনা করা সমীচীন নয়। বরং, গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় এ বারের উপনির্বাচনে কিছুটা কম ভোট পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য। কংগ্রেস পৃথক ভাবে প্রার্থী দেওয়ায় এ বারে বিশেষ উল্লসিত হতে দেখা গিয়েছিল দলীয় নেতৃত্বকে। প্রার্থীর হয়ে তালড্যাংরা কেন্দ্রের নানা জায়গায় প্রচারে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীরা এসেছিলেন। তবে ফলে তার বিশেষ পড়েছে বলে দেখা যাচ্ছে না।
ঘটনা হল, বাম আমলে তালড্যাংরা কেন্দ্রের আওতায় থাকা সিমলাপাল ব্লকের গ্রামগুলিতে কংগ্রেসের ভালই সংগঠন ছিল। ১৯৯৮-এ তৃণমূল নতুন দল হিসেবে উঠে আসার পরে থেকে কংগ্রেসের শক্তিক্ষয় শুরু। নির্বাচনের ফলে হতাশ জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আর ভাল মানুষেরা ভোটে জয় পান না! দান-খয়রাতির রাজনীতির সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের একচেটিয়া মদত পাচ্ছে তৃণমূল। তার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারলাম না।” সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির অভিযোগ, “ইভিএম বদল হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত। স্বচ্ছ ভাবে নির্বাচন হলে আমাদের ভোট অনেকটাই বাড়ত।”
একক ভাবে ভোটে লড়েও ফলে প্রভাব না পড়ার জন্য অবশ্য অন্য কারণও দেখছেন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ।
অরূপ, অজিতেরা বলছেন, “উপনির্বাচনে ভোটারেরা রাজ্যে পালাবদলের আশা রাখেন না। তাই ভোটও দেন অন্য ভাবে। বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে জোটশক্তির বিচার করা উচিত।”
তবে তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “বিজেপির সঙ্গে তলায় তলায় জোট বাঁধতে গিয়েই সিপিএম ও কংগ্রেসের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। পুলিশ, প্রশাসন বা আমাদের দলের ভোট-নীতির দোহাই দিয়ে ওরা মানুষের চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না।”
জোট বাঁধার দাবি অবশ্য মানেননি বিজেপির জেলা নেতৃত্ব।