গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
ধার দেনায় ডুবে সরকার। তাই ‘আধপেটা’ খেয়ে থাকতে হচ্ছে পাকিস্তানের মন্ত্রী আমলাদের। দুপুরের ভাতও জুটছে না কপালে। বৈঠকের ফাঁকে শুধু বিস্কুট-কুকিজ মুখে উঠছে। অথচ আগে সরকারি বৈঠকে ভূরিভোজের ব্যবস্থা থাকত।আর এ সবই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশে। এভাবেই ব্যয় সঙ্কোচ করতে চান তিনি!
শুধু তাই নয়, এতদিন সরকারি কাজে যে সমস্ত বিলাসবহুল গাড়ি, হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হত, একে একে সেগুলিকেও বিদায় করছেন ইমরান। সম্প্রতি বিএম ডব্লিউ, বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ-সহ প্রায় ১০০টি দামি গাড়ি ওকয়েকটি পুরনো হেলিকপ্টার নিলামে তোলেন।নওয়াজ শরিফের আমল থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ৮টি মহিষ ছিল। সেগুলিকেও বিক্রি করার প্রস্তুতি চলছে।
কিন্তু এভাবে সমস্ত ধার দেনা মিটিয়ে ফেলা কি সম্ভব? সে দেশের অর্থনীতিবিদদের একাংশতা মনে করছেন না। তাঁদের দাবি, দুর্নীতিমুক্ত সরকার গড়বেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা। তাই লোক দেখাতে মন্ত্রী-আমলাদের ভাতে মেরেছেন। গাড়ি-কপ্টার বিক্রি করছেন। যাতে মানুষ বিশ্বাস করেন যে, তিনি প্রতিশ্রুতি পালন করছেন।তবে এভাবে দেশের অর্থ সঙ্কট দূর করা যায় না।
কারণ মঙ্গলবারই ২ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি বাজেট ঘাটতির কথা প্রকাশ করেন পাক অর্থমন্ত্রী আসাদ উমর। যে গাড়িগুলি নিলামে উঠেছে, সেগুলির বেশিরভাগই মান্ধাতা আমলের। প্রায় ৩০-৩২ বছর পুরনো। সেগুলি বিক্রি করে খুব বেশি হলে ২৫-৩০ কোটি টাকা আসবে। বিপুল পরিমাণ ঘাটতি মেটাতে তা কোনও কাজে আসবে না।
ইমরানের জীবন যাত্রা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ইসলামাবাদে পাহাড়ের ওপর ৩৮ একর জুড়ে নিজের প্রাসাদোপম অট্টালিকায় থাকেন তিনি। পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠা রাস্তা থেকে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫০০ নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন থাকে ২৪ ঘণ্টা। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের দূরত্ব মোটে ১৪ কিলোমিটার। ওইটুকু দূরত্ব পেরোতেই গত মাসে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিলেন ইমরান। যার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে।
এ ছাড়াও আরও সমস্যার মুখোমুখি হতে চলেছে ইমরান খানের সরকার। বর্তমানে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। যার মাত্র ১ শতাংশ নিয়মিত আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। খুব শিগগির আইএমএফ থেকেও বেরিয়ে যেতে হতে পারে তাদের। সন্ত্রাস দমনে উদ্যোগ নেয়নি বলে এমনিতেই তাদের ওপর চটে মার্কিন সরকার। সামরিক অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই তাদের সামনেও হাত পাতার উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র চিন ও সৌদি আরবই তাদের ভরসা। যে কারণে মঙ্গলবারই দু’দিনের সৌদি সফরে বেরিয়ে গিয়েছেন ইমরান খান।