প্রতিবাদের ভাষা: বিক্ষোভ-জমায়েতে সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা। শনিবার ইয়াঙ্গনে। রয়টার্স
বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে ব্যাপক হারে বল প্রয়োগ করছে সেনা— সম্প্রতি এই অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছিলেন মায়ানমারে নিযুক্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত তদন্তকারী অফিসার টমাস অ্যান্ড্রুস। সেই রেশ টেনেই এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জে চিঠি লিখলেন মায়ানমার পার্লামেন্টের ৩০০ জন সদস্য। সেনা অভ্যুত্থানের জেরে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি ঠিক কোন পর্যায় পৌঁছে গিয়েছে, মানবাধিকার পরিষদের কাছে তা তদন্ত করে দেখার আর্জি জানিয়ে জেনিভায় সদর দফতরের ঠিকানায় আবেদন জানিয়েছেন এই এমপি-রা। এ দিকে, শনিবার দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়ল সেনার বিরুদ্ধে চলা গণতন্ত্রকামীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন। এ দিনও দেশ জুড়ে যা পরিস্থিতি তাতে স্পষ্ট যে, কোনও পক্ষই পিছু হটতে রাজি নয়।
এমপি-দের চিঠি পাওয়ার পর শুক্রবারই জরুরি বৈঠক ডাকা হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরে। বৈঠকে চিঠিটি পাঠ করেন রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত ব্রিটেনের প্রতিনিধি জুলিয়ান ব্রেথওয়েট। মানবাধিকার পরিষদকে অবিলম্বে মায়ানমারে তদন্ত শুরুর আর্জি জানান তিনি। মায়ানমারে নিযুক্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত তদন্তকারী অফিসার টমাস অ্যান্ড্রুস বৈঠকে জানান, তদন্তকারীদের সে দেশে প্রবেশ বা অন্য কোনও ভাবে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা নিষিদ্ধ করেছে সেনা। তা সত্ত্বেও অবশ্য ছবি এবং রিপোর্টের মতো বিভিন্ন প্রমাণ প্রকাশ্যে আসা আটকানো যায়নি। যার দ্বারা স্পষ্ট, কী ভাবে আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জনতার উপর গুলি চালিয়েছে বাহিনী।
মায়ানমারবাসীদের এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে দেশটির উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র কেনাবেচার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি সেখানকার সামরিক নেতৃত্বের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও ভেবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন অ্যান্ড্রুস। নিরাপত্তা পরিষদের ৪৭জন সদস্য শুক্রবার ভোটাভুটির মাধ্যমে বন্দিদের ‘নিঃশর্তে এবং অবিলম্বে মুক্তির’ দাবি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস করেছেন। পাশাপাশি সে দেশে ইন্টারনেটের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া ছাড়াও মানবাধিকার বিষয়ক নজরদারি চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের প্রবেশাধিকার ফেরানোর উপরেও ওই প্রস্তাবে
গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে শুক্রবারও রবার বুলেট ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে মায়ানমারের পুলিশের বিরুদ্ধে। এমনকি বিক্ষোভে অংশগ্রহণের ‘অপরাধে’ বিভিন্ন পেশায় কর্মরতদের বাড়িতে ঢুকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁদের আটকের চেষ্টাও চালিয়ে গিয়েছে বাহিনী। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে এই সম্পর্কিত একাধিক ভিডিয়ো। যেখানে দেখা গিয়েছে, বাড়ির সদস্যের আটক হওয়া আটকাতে গিয়ে বাহিনীর সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন আত্মীয়েরা। অন্য দিকে, ‘ক্রমাগত ভুয়ো তথ্য ছ়ড়ানোয়’ তাদের প্ল্যাটফর্মে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টগুলি নিয়ন্ত্রিত করা হবে বলে জানিয়েছে ফেসবুক।
এ দিকে শনিবারও পাঁচ থেকে ছ’জনের বেশি জমায়েতের উপর সেনার জারি করা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই রাস্তায় নামে মায়ানমারের জনতা। দেশের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গন-সহ বিভিন্ন জায়গায় চলে বিক্ষোভ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শনিবার বিক্ষোভকারীদের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিলেন আইনজীবীরা।