ইটালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পরে উদ্ধারের হওয়া এক শরণার্থী। রয়টার্স
তিউনিশিয়া উপকূলের কাছে ভূমধ্যসাগরে নৌকা উল্টে প্রাণ হারালেন অন্তত ৭০ জন শরণার্থী। তাঁদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। ১৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গিয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাইকমিশনারের অফিস (ইউএনএইচসিআর)। বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে কয়েক জন জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার লিবিয়ার জ়ুয়ারা থেকে তাঁরা নৌকায় পাড়ি দিয়েছিলেন। পথে নৌকা বদলের পরে উঁচু ঢেউয়ে বিপদে পড়ে তাঁদের রবারের নৌকা। রাষ্ট্রপুঞ্জের অভিবাসী সংক্রান্ত সংস্থার ব্রিটিশ শাখা আইওএম জানাচ্ছে, চলতি বছরের এই ক’মাসে ভূমধ্যসাগর পেরোতে গিয়ে ৪৪৩ জন শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তিউনিশিয়ার এই দুর্ঘটনাতেই এক সঙ্গে এত শরণার্থীর মৃত্যু হল বলে জানাচ্ছে ইউএনএইচসিআর।
উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লিবিয়ার উপকূল থেকে ৭৫ জন রওনা দিয়েছিলেন ইটালির উদ্দেশে। গভীর সাগরে পৌঁছে বড় নৌকা থেকে থেকে তাঁদের ছোট একটি নৌকায় তোলা হয়। রবারের তৈরি হাওয়ায় ফোলানো সেই নৌকাটি মিনিট দশের মধ্যেই ডুবে যায়। তিউনিশিয়ার মৎস্যজীবীরা ১৬ জনকে উদ্ধার করতে সমর্থ হন। তাঁদের মধ্যে ১৪ জনই বাংলাদেশের নাগরিক। শনিবার সকালে তাঁদের উপকূলে নিয়ে আসা হয়। তখনও আতঙ্ক কাটেনি তাঁদের। কোনও মতে কয়েক জন তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানাতে পেরেছেন। বলেছেন, ‘‘টানা আট ঘণ্টা আমরা ঠান্ডা সাগরের পানিতে ভেসে ছিলাম।’’ নৌকাটিতে মোট কত জন যাত্রী ছিলেন, তা নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারছে না কেউই। উদ্ধার হওয়া লোকজনের কথার ভিত্তিতেই একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, নৌকাটিতে অন্তত ৫১ জন বাংলাদেশি ছিলেন। আর ছিলেন ৩ জন মিশরীয় ও মরক্কো, শাদ ও আফ্রিকার কয়েক জন নাগরিক। এই হিসেব থেকে অনুমান করা হচ্ছে, অন্তত ৩৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তিউনিশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানাচ্ছে, তাদের নৌসেনা এখনও পর্যন্ত মাত্র তিন জনের দেহ উদ্ধার করতে পেরেছে। তবে উদ্ধারের কাজ চলছে জোর কদমে। ত্রিপোলিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সিকান্দার আলি জানাচ্ছেন, তাঁরা তিউনিশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
তিউনিশিয়ার প্রতিরক্ষা দফতর জানাচ্ছে, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রে পাড়ি দেয় তাদের একটি জাহাজ। সেটি পৌঁছে দেখে, মৎসজীবীদের একটি নৌকা ইতিমধ্যেই অভিবাসীদের উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে।
প্রতি বছরই ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে যাওয়ার জন্য লিবিয়া থেকে রওনা দেন হাজার হাজার অভিবাসী। বেশির ভাগ সময়েই যে ধরনের নৌকা ব্যবহার করা হয়, সেগুলির ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। বহন ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী তোলা হয়। ফলে প্রায়ই মাঝসমুদ্রে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
যদিও ২০১৭-র মাঝামাঝি থেকে অভিবাসীদের ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার হার কিছুটা হলেও কমেছে। কারণ, মানবাধিকার সংগঠনগুলির কড়া সমালোচনা উপেক্ষা করে লিবিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিবাসী অনুপ্রবেশের উপর নজরদারি চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে ইটালি। ফলে মাঝসমুদ্রে কোনও শরণার্থীদের নৌকা নজরে এলেই সেটিকে আটক করার নির্দেশ রয়েছে লিবিয়ার বাহিনীর কাছে। এক বার ধরা পড়লে লিবিয়ায় ফেরার পথও বন্ধ ওই অভিবাসীদের।
তা সত্ত্বেও, ২০১৯-এর প্রথম দু’মাসে এই ভূমধ্যসাগর দিয়ে অন্তত ১৫ হাজার ৯০০ জন উদ্বাস্তু ইউরোপে ঢুকেছেন বলে সূত্রের খবর। এটা ২০১৮-র প্রথম তিন মাসের নিরিখে ১৭% কম। জানুয়ারিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়, ২০১৮ সালে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপে ঢুকতে গিয়ে রোজ গড়ে ছ’জন উদ্বাস্তু দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।