স্কটল্যান্ডের ডাম্বারটন শহরে ১৫০ বছর আগে নির্মাণ করা হয় 'ওভারটন ব্রিজ'। এই সেতু ঘিরেই ঘনিয়েছে রহস্য।
ক্লাইডে নদীর উত্তর দিকে ডাম্বারটন শহরটি অবস্থিত। ক্লাইডের শাখা নদীটি লেভেন। তার উপরেই রয়েছে এই সেতু।
কিন্তু এই ডাম্বারটন সেতুর আশপাশেই নিজের প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা। অনেক পর্যটকও এড়িয়ে চলতে চাইছেন এই সেতু।
১৮৯৫ সালে তৈরি সেতুটিকে ‘ডগ সুইসাইডাল ব্রিজ’ নামে ডাকা শুরু হয় সেই সময় থেকেই।
বেসরকারি মতে ৬০০টি আর সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬টি কুকুর এই সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়েছে নিচে, অল্প জলের পাথুরে জমিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রতিটি সারমেয়রই। ১৯৫০-এর দশকেই নাকি ৬০০টি কুকুর ঝাঁপ দিয়েছিল এই সেতু থেকে।
শোনা যায়, এই সেতুর আশপাশে ঘোরাফেরা করলেই নাকি যে কোনও কুকুর অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে। কারও মতে, শুধুমাত্র হতাশায় ভোগা কুকুরদের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে।
সেতুটি কিন্তু অসাধারণ দেখতে। মারাত্মক মজবুত পাথরকুচি দিয়ে তৈরি প্রাচীন এই সেতু।
মূলত সেতুটির ডান দিকের একটা অংশ থেকেই নাকি ঝাঁপ দেয় কুকুরগুলি। ২০০৫ সালেও পাঁচটি কুকুরের ঝাঁপ দেওয়ার খবর জানা গিয়েছিল। যা এই সেতুর রহস্য আরও বাড়িয়েছে।
১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে এক ব্যক্তি নাকি নিজের দু’সপ্তাহ বয়সি সন্তানকে ‘পিশাচ পুত্র’ বলে সেতু থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। পরে সেই ব্যক্তি নিজেও সেতু থেকে ঝাঁপ দেন। তবে তিনি নাকি বেঁচে যান।
প্রাণীবিদ ও মনোস্তত্ত্ববিদদের অনেকে এই স্থানে এসে এরপর অনুসন্ধান শুরু করেন। ডেভিড স্যান্ড নামে ল্যাঙ্কাশায়ারের এক প্রাণীবিদের দাবি, সেতুগুলির দু’পাশে রয়েছে মাঝারি উচ্চতার দেওয়াল, তাই তাঁরা বুঝতেই পারে না, সেতুর নীচে কী রয়েছে। আর সেই বিভ্রান্তি থেকেই ঝাঁপ দিয়েছে কুকুরগুলি।
এক প্রাণীবিদ বলেন, রোদ থাকলে এই অঞ্চলে বেজি ও ইঁদুরজাতীয় প্রাণীর গন্ধ অনেক বেশি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। সেই প্রাণীগুলির আকর্ষণে দেওয়াল বেয়ে ওঠার চেষ্টা করে সারমেয়গুলি। উচ্চতা বোঝার আগেই ঝাঁপ দেয়। কিন্তু সারা স্কটল্যান্ডে ২৬ হাজারের মতো এই প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। তা হলে শুধু এখানেই কেন? এই প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।
সাধারণত যে সব কুকুরের ক্ষেত্রে নাকের অংশ (স্নাউট) লম্বা তারাই নাকি বেশি পরিমাণে সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়েছে, এমনটাও বলেছেন কেউ কেউ। বিজ্ঞানীদের দাবি, লম্বা স্নাউট হলে গন্ধ শোঁকার ক্ষমতা বেশি হয়। তাই সেতুর দিকে বেশি যেতে চায় সারমেয়গুলি।
রোদ ঝলমল দিনগুলিতেই মূলত এই কুকুরগুলির ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা নাকি ঘটেছে। যার ফলে প্রাণীবিদদের এই দাবিই অনেক বেশি জোরাল বলে মনে হচ্ছে। যদিও স্থানীয়দের দাবি, এলাকায় অত সংখ্যক বেজি নাকি নেই।
সাইকোসিস নামে একটি রোগের থেকেও এই ঝাঁপ দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, বলছেন অপর এক প্রাণী মনস্তত্ত্ববিদ। কিন্তু শুধুমাত্র ডাম্বারটনের এই সেতু থেকেই কেন ঝাঁপ দেওয়ার প্রবণতা বেশি? নেই কোনও পোক্ত উত্তর।
স্থানীয়দের অবশ্য দাবি, এই সেতু ভূতুড়ে। সেতুটির পাশেই রয়েছে ওভারটোন হাউস। স্থানীয়দের দাবি, সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের প্রেতাত্মাদের দেখা পেয়েই নাকি কুকুরগুলি ঝাঁপ দেয়! স্বাভাবিক ভাবেই এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কারও আবার দাবি, কিছুটা দূরেই একটি পারমাণবিক কেন্দ্র রয়েছে। সেখান থেকে নাকি শব্দ আসে, আর তাই নাকি কুকুরগুলি দিশাহারা হয়ে পড়ে।
প্রাণীবিদ স্যান্ড নিজের কুকুর হেনড্রিক্সকে নিয়ে সেতু পার হন। তবে তিনি জানান, সেতু পার হওয়ার শেষ মুহূর্তে হেনন্ড্রিক্স খুবই বিচলিত হয়ে ওঠে। বয়সের কারণে ব্রিজের ওপর থেকে লাফানোর সামর্থ্য হেনন্ড্রিক্সের ছিল না। তাঁর ধারণা, গন্ধের কারণেই অস্থির হয়ে উঠেছিল তাঁর পোষ্য।
মেরি আর্মোর নামে এক মহিলা তার ল্যাব্রাডরকে নিয়ে এই ওভারটোন হাউসের পাশেই সেতুটির উপর দিয়ে হাঁটাচলা করে জানান, জায়গাটি অত্যন্ত নির্জন, শান্ত। তাই হয়ত নানা রকম কথা শোনা যায়।